ডাকসু নির্বাচন: প্রার্থী হচ্ছেন কারা

সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণার পর গতি পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আয়োজনের কার্যক্রম। আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। এরই মধ্যে ভোটার তালিকা প্রণয়ন, প্রধান ও অন্যান্য রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচনী আচরণবিধির খসড়া প্রণয়নসহ বিভিন্ন কাজ শেষ হয়েছে। আগামীকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনী ও নির্বাচনী আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হবে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে ক্যাম্পাসে এখন প্রধান আলোচনা ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে কারা হচ্ছেন প্রার্থী। ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ভেতরেও এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, নিয়মিত ছাত্র, সাধারণ ছাত্রদের কাছে জনপ্রিয় এবং তাদের ভোট ও সমর্থন কাড়তে সমর্থ হবেন, এমন নেতাদেরই প্রার্থী করার কথা ভাবছেন তারা। অন্যদিকে, কোনো রাজনীতির সঙ্গে সংশ্নিষ্ট নন, এমন সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ হাজার ছাত্রছাত্রীদের চাওয়া যিনি বুঝতে পারবেন, দাবি পূরণে উদ্যোগী ও কর্মঠ, নির্লোভ ও কোনো বদনাম নেই- এমন প্রার্থীদেরই ভোট দেওয়ার কথা ভাবছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে এখন নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ছাত্র-শিক্ষক সবার মধ্যে দেখা দিয়েছে নতুন আগ্রহ। ক্লাসে-মাঠে-আড্ডায় সর্বত্র এখন আলোচনার অন্যতম ইস্যু ডাকসু নির্বাচন। এসব আলোচনায় ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কারা? কোন সংগঠনের প্যানেল কেমন হবে? এ রকম বেশকিছু প্রশ্ন গুরুত্ব পাচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের প্রার্থিতার বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। তবে এ নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে।

ডাকসুর গঠনতন্ত্রের ৪ ধারার ১ ও ২ উপধারা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ও অনাবাসিক সব নিয়মিত শিক্ষার্থীই ডাকসুর সদস্য। এর জন্য তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আর্থিক প্রাপ্য পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া ডাকসু নির্ধারিত নিবন্ধন ফি দিয়ে অনিয়মিত শিক্ষার্থীরাও সদস্য হতে পারেন। একই ধারার ৩, ৪ ও ৫ উপধারা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদেরও নিবন্ধন ফির বিনিময়ে ডাকসুর সদস্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই প্রক্রিয়া দুই ধরনের। একটি হচ্ছে সাধারণ সদস্য ও আরেকটি আজীবন সদস্য। ডাকসুর কার্যনির্বাহী সংসদ চাইলে দেশের যে কোনো বিশিষ্ট নাগরিককে ডাকসুর আজীবন সদস্য ঘোষণা করতে পারে।

ডাকসুর গঠনতন্ত্রে ১৯৯১ সালে আনা সংশোধনী অনুযায়ী, নিয়মিত শিক্ষার্থীরা ভোটার ও প্রার্থী হতে পারলেও যারা এমফিল ও পিএইচডি করছেন, তারা ভোটাধিকার পেলেও প্রার্থী হতে পারবেন না। এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্স বা অন্য কোনোভাবে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখা শিক্ষার্থীরা ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন না।

ফলে ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নিয়মিত শিক্ষার্থীর শর্ত পূরণ করতে না পারায় ছাত্রলীগ, ছাত্রদল এবং বাম সংগঠনের অনেক শীর্ষ নেতাই প্রার্থী হতে পারবেন না। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার শীর্ষ চার নেতার মধ্যে তিনজন; ছাত্রদলের চারজন; প্রগতিশীল ছাত্রজোটভুক্ত চারটি বামপন্থি ছাত্র সংগঠন ও ছাত্রসংগ্রাম পরিষদভুক্ত তিনটি ছাত্র সংগঠনের ১০ জন- সব মিলিয়ে ৯টি সংগঠনের ১৭ নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মতামত ও গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য গঠিত কমিটির সুপারিশ নেওয়া হয়েছে। এবার ভোটার ও প্রার্থিতার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তবে যারা ভোটার হতে পারবেন, তারা প্রার্থীও হতে পারবেন বলে মোটামুটি সবাই একমত হয়েছি।

ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির প্রধান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ডাকসুর গঠনতন্ত্রে প্রার্থী ও ভোটারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। যারা সদস্য হতে পারবেন, তারা প্রার্থীও হতে পারবেন। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে যারা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে রয়েছেন, তারাই ভোটার ও প্রার্থী হবেন। যারা স্নাতক করেননি, তারা ডাকসুর সদস্য নন। আগের গঠনতন্ত্রে এ বিষয়ে যা ছিল, সেটিই বহাল রাখা হয়েছে। একমাত্র নিয়মিত ছাত্ররাই হবেন ডাকসুর ভোটার ও প্রার্থী।

জানা গেছে, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই ঘোষণা হতে পারে নির্বাচনের তফসিল। তাই প্রার্থিতার ক্ষেত্রে চারটি প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। সম্ভাব্য প্যানেলগুলো হলো- বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। প্যানেল গঠন নিয়ে নিজ নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন কথাবার্তা চলছে।

সূত্র জানায়, এরই মধ্যে ‘সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদে’র অধীন সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রাথমিকভাবে আলোচনা করেছেন ছাত্রলীগ নেতারা। সংগঠনগুলোর সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে ছাত্রলীগ। এ ছাড়া টিএসসির সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ও পাহাড়ি ছাত্র সংগঠনগুলোকে প্যানেলে যুক্ত করতে আলোচনা চালাচ্ছেন তারা।

অন্যদিকে, প্যানেল চূড়ান্ত করতে বিভিন্ন হল শাখার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে ছাত্রদল। অতীতে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্রদলের অবদান তুলে ধরতে গোপনে কাজ করে যাচ্ছে তারা। এককভাবে প্যানেল দিতে তাদের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ, সাম্রাজ্যবিরোধী ছাত্র ঐক্য, পাহাড়ি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্যানেল করতে পারে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এখন পর্যন্ত জোটের পক্ষ থেকে একটা সম্মিলিত প্যানেলের ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেবে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারীরা। নির্বাচনে অংশ নিতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা ছাড়াও বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারা।

ছাত্রলীগের প্যানেলে প্রার্থী হতে পারেন যারা : ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের তিন শীর্ষ নেতাই বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ২০০৮-০৯ এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের। সে হিসেবে এ তিন নেতা নিয়মিত ছাত্রের তালিকায় পড়েন না। সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন ভর্তি হন ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে। গঠনতন্ত্র অনুসারে, এই চার নেতার মধ্যে শুধু সাদ্দাম হোসাইনই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। শিক্ষা বিরতি থাকায় তার ছাত্রত্ব এখনও শেষ হয়নি।

এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ-কৃষিশিক্ষা বিষয় সম্পাদক আসিফ উদ্দিন আহমেদ, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন।

এদিকে প্রার্থিতা ঘোষণা নিয়ে দোটানায় রয়েছে এ সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। কারণ নতুন কমিটি গঠনের পর প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও তারা এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি। গঠন হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটিও। ফলে ডাকসু ও হল সংসদগুলোয় প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, যেহেতু দীর্ঘদিন পর নির্বাচন হচ্ছে, তাই একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রার্থী হওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া যেতে পারে। তাদের সেই সুযোগ পাওয়া উচিত বলে মনে করি। তবে সবাই যেভাবে নির্বাচন করবেন, আমরা সেভাবেই প্রার্থী ঠিক করব। আমরা গঠনতন্ত্রের বাইরে যাব না।

জাসদ ছাত্রলীগ : এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দু’জনই ঢাকা কলেজের ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাসুদ আহমেদ ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে ও সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পাল ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তারা কেউই প্রার্থী হতে পারবেন না। জাসদ (আম্বিয়া) সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঢাবির শিক্ষার্থী নন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদেকুুর রহমান সাগর ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রাহাত ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তারা প্রার্থী হতে পারবেন। ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রুদ্র রফিকুল্লাহ রাব্বী ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাসেল ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তারা দু’জনই ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন।

ছাত্রদল প্যানেল : ছাত্রত্ব না থাকায় ছাত্রদলের শীর্ষ চার নেতার কেউই ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ২০০২-০৩, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার ২০০৩-০৪, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান ১৯৯৫-৯৬, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেই হিসেবে তারা চারজনও নিয়মিত ছাত্রের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন অনেক আগেই। ফলে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এ ছাড়া সংগঠনটির বিভিন্ন হল শাখার নেতাদেরও ছাত্রত্ব নেই। প্রতিটি হলে সংগঠনটির পনেরো থেকে ত্রিশজনের আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে।

ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের বাধার কারণে অনেক নেতাকর্মীর শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়েছে। তাদের দলের অনেকেই নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রার্থিতার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে পারে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বাইরেও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত।

ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান রাফসান, সূর্য সেন হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহফুজ চৌধুরী, তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ, ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নুরে আলম ভূঁইয়া ইমন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বোরহান উদ্দীন নয়ন, জিয়া হল ছাত্রদলের সদস্য মো. ইমন প্রমুখ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন।

প্রগতিশীল ছাত্রজোট : ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি জি এম জিলানী ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না। সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। ছাত্রত্ব না থাকায় বাদ পড়বেন তিনিও। সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে আর সাধারণ সম্পাদক রাজীব দাস ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। বিদ্যমান গঠনতন্ত্র অনুসারে, এ দুই নেতা ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আলমগীর হোসেন সুজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল করছেন। সাধারণ সম্পাদক রাজীব গান্ধী রায় ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বাসদ (মার্ক্সবাদী) সমর্থিত ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী এবং সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা দু’জনই ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে এ ক্ষেত্রে সালমানেরই কেবল ছাত্রত্ব রয়েছে।

ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেউই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক ইশতিয়াক ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। এ ক্ষেত্রে ইশতিয়াকই কেবল প্রার্থী হতে পারবেন।

বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র গণমঞ্চ, ছাত্র সমিতি, ছাত্র ফোরামসহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য যোগাযোগ করছে। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এসব সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বেশিরভাগ নেতাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন।

এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, এরা ভোটার হবে, ওরা প্রার্থী হবে- আমরা এরকমভাবে বিশ্বাসী নই। আমরা মনে করি, যাদের ভোটাধিকার থাকবে, তাদের প্রার্থিতার অধিকারও থাকবে।

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ : গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্দোলন শুরু করার দিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে ৪০ জনই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আন্দোলনকে ঘিরে আটজন যুগ্ম আহ্বায়কসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করা হলে পরে তাদের অনেকেই নিষ্ফ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। এখনও ৩৬ জন সক্রিয় রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৮ জনের ঢাবির ছাত্রত্ব রয়েছে। তাদের মধ্য থেকে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর, রাশেদ খান, ফারুক হাসান- এই তিনজনের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বাদ পড়তে পারেন। এ ছাড়াও পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজ খান, বেলাল, সোহরাব হোসেন, বিন ইয়ামিন মোল্লা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন।

যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছি। তাই শিক্ষার্থীদের অধিকার বাস্তবায়নে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন করার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতা রয়েছে। নতুনদের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। ছাত্রদের অধিকার আদায়ে যারা আন্তরিক, সে রকম সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়েও প্যানেল করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

ভোটার তালিকা : গত বছরের ৩১ অক্টোবর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে হলভিত্তিক শিক্ষার্থীদের ডাটাবেজ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রকাশিত তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের সঙ্গে সংযুক্ত ও আবাসিক মিলিয়ে মোট ৩৮ হাজার ৪৯৩ জন শিক্ষার্থীর নাম রয়েছে। এর মধ্যে ২৩ হাজার ৯৮৪ জন ছাত্র ও ১৪ হাজার ৫০৯ জন ছাত্রী। উপাচার্য তখন বলেছিলেন, এটি পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা নয়। তবে গঠনতন্ত্র সংশোধনের ব্যাপারে সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে।

খসড়া আচরণবিধি প্রকাশ : ডাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি চূড়ান্ত করার বিষয়ে সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলোর কাছে খসড়া তালিকা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আচরণবিধির কোথাও কোনো সংশোধনের প্রয়োজন হলে, সে বিষয়ে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে লিখিতভাবে সংশোধনের প্রস্তাবনা শনিবার জমা দিতে বলেছে প্রশাসন। সে অনুযায়ী ছাত্র সংগঠনগুলো গতকাল তাদের প্রস্তাব জমা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস থেকে গত বৃহস্পতিবার ছাত্র সংগঠনগুলোর কাছে আচরণবিধির খসড়া এ তালিকা দেওয়া হয়। সংগঠনগুলোর সুপারিশ নেওয়ার পর আচরণবিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত হবে।

প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক এম মাহফুজুর রহমান বলেন, সোমবার সিন্ডিকেট সভা হবে। সেখানে বিধি মোতাবেক সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। আর খসড়া আচরণবিধির তালিকা প্রক্টরের মাধ্যমে ছাত্র সংগঠনগুলোর কাছে চলে গেছে। তাদের মতামত পাওয়ার পর সেটা চূড়ান্ত আকারে প্রকাশ করা হবে। সব কার্যক্রম সমানতালে এগোচ্ছে।

গত ২৩ জানুয়ারি ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তার ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১১ মার্চ রোববার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। ১৯৯০ সালের নির্বাচনের পর মোট পাঁচবার ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ও সময়সীমা ঘোষণা করা হলেও ডাকসু আলোর মুখ দেখেনি। সূত্র: সমকাল।