চমক থাকবে আ’লীগের ইশতেহারে

মো. আবদুস সবুর, প্রকৌশলী। আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক। প্রকৌশলীদের শীর্ষ সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) সভাপতি।

কুমিল্লা দাউদকান্দির সন্তান আবদুস সবুর বুয়েট ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জিএস ছিলেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-১ (মেঘনা-দাউদকান্দি) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন আবদুস সবুর। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন।

নির্বাচনের মনোনয়ন, সমসাময়িক রাজনীতি, যুক্তফ্রন্টের ঐক্য, নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের ইশতেহারসহ নানা বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।

প্রথমেই নিজের মনোনয়ন বিষয়ে আবদুস সবুর জানান, গ্রিন সিগন্যাল কিনা জানি না। তবে এসব বিষয় চূড়ান্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত কিছু বলা ঠিক হবে না। ছাত্রাবস্থা থেকে এলাকার রাজনীতি ও উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি। প্রকৌশলী হওয়ার পর তাতে গতি পেয়েছে। এলাকার মানুষের প্রয়োজন এমন স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, ব্রিজ-কালভার্ট, রাস্তা-ঘাট করে দিচ্ছি। প্রকৌশলী হওয়ায় এসব কাজে আমাকে তেমন বেগ পেতে হয় না। এসব দেখেই হয়তো এলাকাবাসী তাদের উপকারে আমাকে খুব করে অনুভব করেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও প্রার্থী মনোনয়ন বিষয়ে একাধিকবার জরিপ করেছেন। আমাদের সবার সব কিছু তার নখদর্পনে। তিনি এখানে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলেও সেটিই চূড়ান্ত। আমরা সবাই নেত্রীর পক্ষে, উন্নয়নের পক্ষে ও নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব।

উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গেই তো আছেন। এমপি হলে আলাদা কিছু তো করা লাগে। সেই পরিকল্পনার সারসংক্ষেপও জানালেন আবদুস সবুর, ‘পরিকল্পনাবিদ বা প্রকৌশলী হিসেবে এবং পেশাগত রাজনীতির কারণে কাজের ক্ষেত্রে সব সময়ই একটা বাড়তি সুযোগ আমি পেয়ে থাকি। কুমিল্লার মধ্যে সবচেয়ে বড় ৫২৬ মিটার ব্রিজ আমি করেছি। দাউদকান্দি-কুমিল্লা সংযোগ সড়ক ৮/৯শ’ মিটারের, এটাও হবে। মনোনয়নের পর জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করলে দাউদকান্দি ও মেঘনার চারদিকে বেড়িবাঁধ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এটি সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এটি হলে হোমনা-তিতাসের মানুষও এর সুফল ভোগ করবেন। বেড়িবাঁধ হলে সেখানে সেচ প্রকল্প চালু হবে, মৎস চাষ হবে। বর্ষাকালে আর পানির নিচে থাকবে না ওই এলাকা। এতে ছোট ছোট কুটির শিল্প গড়ে উঠবে। এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আরেকটি বিষয় হলো; ঢাকা-চট্টগ্রাম সরাসরি ডাবল রেললাইন হলে আধা-ঘণ্টায় আমার দাউদকান্দি যাওয়া সম্ভব হবে। দুটি উপজেলায় দুটি স্যাটেলাইট টাউন গড়ার পরিকল্পনা আছে। তাতে সবাই পরিকল্পিত নগরের সব সুবিধা পাবেন, জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।’

নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়েও কথা বলেন এই প্রকৌশলী। তবে দিন শেষে সবাই শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকেই মেনে চলেন, এই আশাও ব্যক্ত করেন, ‘আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও সুবিশাল দল। এত বড় দলে সামান্য কলহ বা নেতাকর্মীদের মাঝে প্রতিযোগিতা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নৌকার প্রশ্নে, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রশ্নে সব সময় ঐক্যবদ্ধ। তিনি যে সিদ্ধান্ত দিবেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবে। এটা আমরা আগের নির্বাচনগুলোতে প্রমাণ পেয়েছি। সেক্ষেত্রে দলের যে অবস্থান, তাতে আগামী নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাব।’

সম্প্রতি যুক্তফ্রন্টের ব্যানারে দেশের প্রবীণ রাজনীতিকদের জাতীয় ঐক্য নিয়ে আবদুস সবুরের বক্তব্য, ‘পরিবর্তন তারা চাইতেই পারেন। ঐক্য করাও দোষের কিছু নয়। আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের ঐক্যে বিশ্বাসী। জনগণের শক্তিই বড় শক্তি। নেতায় নেতায় ঐক্যে হতে পারে, তবে সেটি সাময়িক। প্রবীণদের এই ঐক্যও জনগণের শক্তির কাছে টিকবে না, বানের জলের মতো ভেসে যাবে। জনগণের ঐক্য না হয়ে, সে জায়গায় গুটিকয়েক হেভিওয়েট নেতার ঐক্য, যারা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নন। এই ঐক্যে আর যাই হোক, কোনো শুভ ফল বয়ে আনবে না।’

নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থান সব সময়ই দেখা যায়। এবারো তার ব্যতিক্রম হবে না। এমন সংকটে দল ও জনগণের করণীয় বিষয়েও আবদুস সবুর কথা বলেন।

তিনি জানান, সংকট মোকাবেলা করেই আজকের আওয়ামী লীগ জনগণের অন্তরে ঠাঁই করে নিয়েছে। পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ’৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ, ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টায় বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা— এসব মোকাবেলা করেই আওয়ামী লীগ আজকের অবস্থানে এসেছে, নিজ গন্তব্যে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সম্পদ শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে সব সংকট মোকাবেলায় করে আওয়ামী লীগ তার লক্ষ্যে পৌঁছবেই।

একাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ইশতেহার সম্পর্কে আবদুস সবুর বলেন, ‘আমাদের দেখানো এক সময়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা। উন্নয়নের বাংলাদেশ এখন বিশ্বেব্যাপী স্বীকৃত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একটি কথা বলেছেন— আগামী দিনে গ্রামকে শহরের সকল সুবিধা দেয়া হবে। অর্থাৎ গ্রাম হবে সকল উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগণ আধুনিক টেকনোলজির সব সুযোগ সুবিধা পাবে। আমরা আবার সুযোগ পেলে উন্নত বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখছি, সেটা বাস্তবায়ন করতে পারব, ইনশাআল্লাহ। ইশতেহার নিয়ে দল কাজ করছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০০ বছরের একটি পরিকল্পনা করেছেন, যেটা ‘ডেল্টা ২১০০’ নামে পরিচিত। আশা করা যায়, আগামী ইশতেহারেও বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু চমকই থাকবে।’