কক্সবাজারে ঝড়ো হাওয়ায় সমুদ্রের পানি বেড়েছে কয়েক ফুট

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে কক্সবাজারে ঝড়ো আবহাওয়া বিরাজ করছে। আজ সকাল থেকেই তীব্র বাতাস বইছে সমুদ্রসৈকত পাড়ে। দুপুরের দিকে সাগর বেশ উত্তাল দেখা গেছে। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে সাগরের তীরে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সমুদ্রে জোয়ারের পানি কয়েক ফুট বেড়ে গেছে। যদিও এর মধ্যেও কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে দেখা গেছে। পাশাপাশি পর্যটকরা যাতে সৈকত ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান, সে জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের মাইকিং করতে দেখা গেছে। স্বেচ্ছাসেবকরা জানিয়েছেন, পর্যটকদের সৈকত থেকে হোটেল-মোটেলে ফিরিয়ে নিতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।
এদিকে অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবিলায় কঠোর প্রস্তুতি নিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। আজ শুক্রবার বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে এমন ধারণায় ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৩৮টি সাইক্লোন শেল্টার। মজুদ রাখা হয়েছে ৪০০ মেট্রিক টন জিআর চাল ও সাড়ে চার হাজার প্যাকেটজাত শুকনো খাবার। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৮৯টি মেডিকেল টিম।
সভায় ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল আফসার জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলাগুলোতে নিয়ন্ত্রণকক্ষের পাশাপাশি উপজেলা ও উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) দেওয়া হয়েছে নির্দেশনা।
আশরাফুল আফসার আরো জানান, প্রায় ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি। দুর্যোগ মোকাবিলা ব্যবস্থা কমিটিগুলোকে সতর্ক রাখা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ঘর করে দিতে ১১৪ বান্ডিল ঢেউটিন ও দুই লক্ষাধিক টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
জেলা সদরসহ উপজেলা ও উপকূলের প্রায় ৫৩৮টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রয়েছে। এতে সাড়ে চার লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। জেলা শহরে স্কুলগুলোও শেল্টার হিসেবে ব্যবহারে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে উপকূলে মাইকিংসহ সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হবে। দুর্যোগকবলিত মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে ১০০ যানবাহন রিকুইজিশন করছে জেলা প্রশাসন।

এ ছাড়া জেলার উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও সদরে ছয়টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এতে ৩৬ দমকলকর্মী কাজ করবেন। তাঁদের সঙ্গে সংযুক্ত করা রয়েছে আরো ২০০ কর্মী।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আরো জানান, উপকূলের পাশাপাশি উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ক্ষয়ক্ষতি রোধে নেওয়া হয়েছে একই রকম প্রস্তুতি। তাদের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা দ্রুত মেরামতের প্রস্তুতি নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে কক্সবাজার ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনারের সঙ্গে আলাদাভাবে জরুরি সভা করা হয়েছে।
এদিকে আশ্রয়কেন্দ্র সংকটে দুর্যোগকবলিত দ্বীপ সেন্টমার্টিন। বিগত সময় যতবারই বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে, সবকটি দুর্যোগের আঘাত সেন্টমার্টিন পেয়েছে। অথচ এটি দুর্যোগকবলিত এলাকা। এখানে অসংখ্য আবাসিক হোটেল থাকলেও এগুলোর মালিক দ্বীপের বাইরের হওয়ায় এসব বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।