এক গোলেই রূপকথার নায়ক মাচাদো

কখনো কখনো একটা গোলই ঘুরিয়ে দিতে ফুটবলারদের ভাগ্যের চাকা। নিয়ে আসতে পারে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দেুতে। আলোচনা, হইচই তো আছেই, গতকাল রাতে করা গোলটি আদোলফো মাচাদোকে বানিয়ে দিল রূপকথার নায়ক। তার এই গোলেই যে দৈত্য ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ড্রয়ের স্বাদ পেয়েছে পানামা। গড়েছে ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো গোল পাওয়ার কীর্তিও।

ফুটবলীয় শক্তিতে ব্রাজিল ও পানামার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ব্রাজিল ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। একমাত্র দেশ হিসেবে খেলেছে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া সব বিশ্বকাপেই। বিপরীতে মধ্য আমেরিকার দেশ পানামা বিশ্ব ফুটবল মানচিত্রে ক্ষুদ্র একটা বিন্দু। যদিও আঞ্চলিক সীমারেখার সুবাদে কালেভদ্রে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। ২০১৮ বিশ্বকাপেও যেমন খেলেছে। কিন্তু গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নেওয়া পানামা বিশ্বকাপে জয়ের মুখ দেখেনি।

দুই দলের মধ্যে পার্থক্য কতটা, সেটি মুখোমুখি সাক্ষাতের পরিসংখ্যানেও স্পষ্ট। এর আগে মোট ৫ বার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। সেই ৫ ম্যাচেই জিতেছে ব্রাজিল। পরাজয় এড়ানো দূরের কথা, সেই ৫ ম্যাচে পানামা কোনো গোলই করতে পারেনি।

এবারও তাই ম্যাচের আগে দৈত্য ব্রাজিলের জয়কেই প্রত্যাশিত ফল মনে হচ্ছিল। কিন্তু মাঠে নেমে সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছেন মাচাদো। ব্রাজিলের বিপক্ষে দেশের হয়ে প্রথম গোল করে বনে গেছেন জাতীয় নায়ক। একটু ভুল হলো। পানামার জাতীয় নায়ক তিনি অনেক আগে থেকেই। জাতীয় দলের হয়ে ৭৯টি ম্যাচ খেলেছেন।

নিখাঁদ ডিফেন্ডার মাচাদো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে এর আগেও একটা গোল করেছেন। কিন্তু গতকালের গোলটি তাকে এবং তার দেশকে নিয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায়। স্বাভাবিকভাবেই ৩৪ বছর বয়সী মাচাদোকে নিয়ে পানামাবাসী মেতেছে বন্দনায়। জাতীয় নায়ক থেকে তিনি যেন এখন পানামার রূপকথার নায়ক।

এই ড্র’টা নিছকই একটা প্রীতি ম্যাচে। কিন্তু তাতেও মাচাদোর অর্জন খাটো হয়ে যাচ্ছে না। ব্রাজিলের বিপক্ষে গোল এবং ড্র করা পানামার জন্য অনেক বড় অর্জন। দেশটির প্রতিটি পত্র-পত্রিকারই প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে মাচাদোর গোল উদযাপনের ছবি। সঙ্গে দেশজুড়ে চলছে মাচাদোর জয়গান।

পানামার কোচ জুলিয়ে ডেলি ইয়ালদেসও শিষ্যের কীর্তিতে পঞ্চমুখ, ‘ব্রাজিলেল বিপক্ষে আমরা ড্র করেছি। নিশ্চিতভাবেই এটা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি। আনন্দটা এ কারণে বেশি যে, ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রথম গোলটা করেছেন এমন একজন, যার কাজ রক্ষণ সামাল দেওয়া। মাচাদোর প্রতি আমি খুব খুশি। সে দারুণ একটা কাজ করেছে। তার এই গোলটি পানামাবাসী চিরকাল মনে রাখবে।’

বিশেষ করে মনে রাখবেন মাচাদো নিজেও। ছোট্ট এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘গোল করার জন্য আমাদের দলে অনেক দক্ষ খেলোয়াড় আছেন। আমার কাজ রক্ষণ সামলানো। খুব ভালো লাগছে যে, নিজের কাজটা ঠিকঠাকভাবে করার পাশাপাশি আমি একটা গোল করেছি। যে গোলটি ব্রাজিলের বিপক্ষে আমাদের ড্র এনে দিয়েছে। ব্রাজিলের বিপক্ষে দেশের হয়ে প্রথম গোলটা আমিই করলাম, এটা ভাবতেই ভালো লাগছে। এই গোলটির কতা আমার সারাজীবন মনে থাকবে।’