অবশ্যই কেমিক্যাল ছিল: তদন্ত কমিটি

রাজধানীর চকবাজারে কেমিক্যালের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে প্রাথমিকভাবে মত দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) তদন্ত কমিটি। শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে ডিএসসিসির ১১ সদস্যের দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনের এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল এসএম জুলফিকার রহমান এ মত দেন।

তিনি বলেন, ভবনের ভেতরে গ্যাস লাইটার রিফিলের পদার্থ ছিল। এটা নিজেই একটা দাহ্য পদার্থ। এছাড়া আরও অন্যান্য কেমিক্যাল ছিল। প্রত্যেকটা জিনিসই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছে। পারফিউমের বোতলে রিফিল করা হতো এখানে। সেই বোতলগুলো ব্লাস্ট হয়ে বোমের মতো কাজ করেছে।

তিনি বলেন, অবশ্যই কেমিক্যাল ছিল। যা যা ছিল, সেগুলো এক ধরনের কেমিক্যাল। ক্যামিকেলের জন্যই আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লেগেছে বেশি।

এছাড়া তদন্ত কমিটির সদস্য ও বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হওয়া ওয়াহিদ ম্যানশনের গ্রাউন্ড ফ্লোর ও দ্বিতীয় তলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিম ও কলামগুলো বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩-৪ তলার বিম ও কলাম তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ বিষয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হবে। এক সপ্তাহ পর জানা যাবে, ভবনটি ব্যবহারের উপযোগী কীনা।

তিনি বলেন, ওয়াহিদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলার পুরোটাতেই গোডাউন ছিল। এটি বেশ বড় ভবন হওয়া সত্ত্বেও আগুন নেভানোর কোনো ইকুইপমেন্ট নেই। পর্যাপ্ত সিঁড়ি নেই। ভবনগুলো বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি হয়নি। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়তো সিলিন্ডার বিস্ফোরণে, কিন্তু কেমিক্যালের কারণে আগুন ছড়িয়েছে।

রাজউকের অথরাইজড অফিসার ও কমিটির সদস্য মো. নুরুজ্জামান জহির বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো রাজউকের অনুমোদিত কীনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়। সরকারি ছুটির কারণে কাগজপত্র দেখা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো খোঁজ নেয়া সম্ভব হয়নি।

ভবনের সঙ্গে ভবন লাগোয়া থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনাকে বুঝতে হবে এটা পুরান ঢাকা। এখানে অনেক আগে থেকেই ভবন তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজউক অনেকদিন ধরে কাজ করছে। তবে সবার আগে দরকার সচেতনতা। এভাবে ভবন নির্মাণের নিয়ম নেই বলেও জানান তিনি।

ডিএসসিসির কমিটির প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, আমরা সকাল ৯টার পর ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো পরিদর্শনে এসেছি। আগুনে পাঁচটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে তিনটি ভবন প্রাথমিকভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী বলে মনে হয়েছে। আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউনের অনুমতি নেই। যে কোনো মূল্যে সবাই মিলে এসব গোডাউন সরিয়ে নেয়া হবে।

এতোদিন সরানো হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই চেষ্টা করে যাচ্ছি। এবার যে কোনো মূল্যে সেসব সরিয়ে নেয়া হবে। এছাড়াও এই ভবনগুলো ব্যবহারের উপযোগী কীনা জানা যাবে এক সপ্তাহ পর।

এর আগে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। ডিএসসিসি সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ কমিটি গঠন করা হয়।

ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিমকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে লাল রঙে ‘ঝঁকিপূর্ণ’ লিখে সাইন বোর্ড টাঙানোর ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়। পাশাপাশি ওইসব ভবন বিষয়ে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ করতে বলা হয় কমিটিকে।

কমিটির সদস্যরা হলেন- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী, অধ্যাপক ইশতিয়াক আহমেদ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক এস এম জুলফিকার রহমান, ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান, ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) জাফর আহমেদ, ডিএসসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম, রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম, রাজউকের পরিচালক শাহ আলম, অথরাইজ অফিসার নুরুজ্জামান জহির এবং কর্পোরেশনের পরিবেশ জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাশেম।