সচিব সভা থেকে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তিন লাখেরও বেশি শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে পর্যালোচনা হয়।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিব সভা হয়। বৈঠকের পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কয়েকজন সচিব সমকালকে এসব তথ্য জানান।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর ২৬ নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হয়। ২০১৭ সালের ২ জুলাই সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী এই ২৬ দফা নির্দেশনা দেন।
এসব নিয়ে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সচিব সভা হবে। এজন্য নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাজের অগ্রগতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের এজেন্ডা আগামী ১৯ মের মধ্যে জানতে চেয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, মাদক নির্মূল এবং ই-নথি ব্যবহারসহ সরকারি সেবা কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কেও পর্যালোচনা করা হয় সচিব সভায়। বৈঠকে অংশ নেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৬৬ জন সচিব। এ সময় সাম্প্রতিক ইস্যুগুলো নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সিনিয়র কয়েকজন সচিব বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থায় শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগে শূন্য পদের তথ্য এবং পদ পূরণের জন্য কর্মপরিকল্পনা চাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠি গত ৪ মার্চ সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থায় পাঠানো হয়। এ ছাড়া ২০১৭ সালের সচিব সভায় শূন্য পদ দ্রুত পূরণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে সচিব সভায় শূন্য পদ পূরণে প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রত্যেক সচিবকে তাগিদ দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এ ছাড়া গত ২৫ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এক কোটি ২৮ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পর তিনি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থায় চিঠি পাঠিয়ে শূন্য পদে নিয়োগের অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন। শূন্য পদ থাকার কারণ শুধু প্রশাসনিক অদক্ষতা নয়। রাজনৈতিক কারণে, মামলা এবং তদবিরেও পদ শূন্য থাকে। তবে অসংখ্য পদ খালি থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের গতিও কমেছে। সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত শূন্য পদ পূরণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
একজন সচিব জানান, সচিব সভার পরবর্তী বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। তাই তিনি যেসব বিষয়ে খোঁজখবর নেন, সেসব বিষয়ের অগ্রগতি নিয়ে গতকাল সচিব সভা হয়েছে। এই সচিব গতকালের সভাকে পরবর্তী সভার ‘রিহার্সেল’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, ২০১৭ সালের ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনের শূন্য পদ দ্রুত পূরণ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সরকারের লাখ লাখ পদ শূন্য থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তাই এবার এত সতর্কতা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) ড. মো. শামসুল আরেফিন বলেন, সচিব সভায় শূন্য পদ পূরণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। কারণ, দেশে বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। একটি পদের বিপরীতে হাজার হাজার প্রার্থী আবেদন করছে। তাই শূন্য পদগুলোতে দ্রুত চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সচিব সভায় পুরনো বিষয়গুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি রয়েছে। তবে সেই অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও গবেষণা সেলের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে ২০ লাখ ৫০ হাজার ৮৬১টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে তিন লাখ ৯৯ হাজার ৮৯৭টি পদ। প্রথম শ্রেণির পদ শূন্য রয়েছে ৪৮ হাজার ৭৯৩টি। দ্বিতীয় শ্রেণির শূন্য পদ রয়েছে ৬৫ হাজার ৮৩টি। তৃতীয় শ্রেণিতে শূন্য পদ রয়েছে দুই লাখ ছয় হাজার ৭৬০টি। চতুর্থ শ্রেণিতে রয়েছে ৭৯ হাজার ২৬১টি। সরকারের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। আর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয়। সূত্র সমকাল।