ডেঙ্গু নিয়ে আর ব্লেম গেম করতে চান না বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা আর ব্লেম গেম করতে চাই না। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মশা যদি জন্ম না নেয়, তাহলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে যাবে। সিটি করপোরেশন তো আর বাড়ির ভেতরে গিয়ে স্প্রে করতে পারবে না। কিন্তু যেখানে নদী-নালা আছে, পানি জমে থাকে সেখানে স্প্রে করা দরকার। তারা স্প্রে করছে, আরও ভালো করে স্প্রে করা দরকার। যত স্প্রে হবে, তত ডেঙ্গু মশার সংখ্যা কমবে।’
রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) আয়োজিত এক সেমিনারে আজ বুধবার এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
চিকিৎসকদের নিজেদের কাজ করতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকদের নির্দেশনা দিয়েন না। তাঁরাই ভালো চিকিৎসা দেবেন। যার যার দায়িত্ব যদি সঠিকভাবে পালন করি, তাহলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
দেশের বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিকও বলছি না, আবার মহামারিও বলছি না। আমরা বলছি, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।’ ডেঙ্গুকে বিশ্বজনীন সমস্যা আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘গত বছর আমরা ১০ হাজার ডেঙ্গু রোগী পেয়েছিলাম। এবার ৩০ হাজার ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মুগদা হাসপাতালে ভালো একটা চিত্র পেলাম। এখানে ডেঙ্গু রোগী আছে ৩৮৭ জন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন ১ হাজার ২০০ জন। এখানে চিকিৎসকেরা ভালো সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে এই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে একটি রোগীরও মৃত্যু হয়নি।’
এ সময় স্থানীয় সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী উঠে এসে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হাতে একটি কাগজ দিয়ে গেলে জাহিদ মালেক বলেন, ‘তাঁরা বলছেন, এ হাসপাতালে ১১ জন মারা গেছে। কিন্তু কতজন ডেঙ্গুর কারণে মারা গেছে, তা নিশ্চিত করতে পারেননি।’
ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কিট এখন দেশে আছে—এমন তথ্য জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটের সংকট ছিল। কিন্তু আমরা কিটের ব্যবস্থা করেছি। প্রতিদিন দুই লাখ কিট দেশে আসছে। এখন কিটের কোনো ঘাটতি নেই।’
দেশে না থাকলেও ডেঙ্গু সম্পর্কে প্রতিনিয়ত নির্দেশনা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমন কথাও জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত বিদেশ থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। এক দিন পরপরই তাঁর সঙ্গে কথা হয়। ওনার নির্দেশনায় বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
স্থানীয় সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘১ হাজার ১০০ রোগী এখন মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী আছে পাঁচ শতাধিক। রক্ত পরীক্ষার পর ২৫ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী ধরা পড়ছে। রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।’
চিকিৎসকদের ওপর ভরসা রাখতে সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএমএ মহাসচিব ইহতেশামুল হক। তিনি বলেন, ‘বিভ্রান্তিকর তথ্যে ফেসবুক সয়লাব হয়ে গেছে। চিকিৎসকদের বিশ্বাস করুন। ডেঙ্গুতে নয়জন চিকিৎসকও মারা গেছেন। আমরা কিন্তু সে ধরনের কোনো সমবেদনা পাইনি।’
বিএমএ সভাপতি ও সাবেক সাংসদ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখা জরুরি। কলকাতা ডেঙ্গু রোধে বছরের ৩৬৫ দিন কাজ করে। এ কারণে সেখানে এবার ডেঙ্গু কম।
‘ডেঙ্গু জ্বরের যথোপযুক্ত চিকিৎসা, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমোটলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আতিকুল হক। কীভাবে ডেঙ্গু রোগ ছড়ায়, ডেঙ্গুর চিকিৎসাপদ্ধতিসহ নানা তথ্য তিনি সেমিনারে তুলে ধরেন।