ক্যাসিনো কাণ্ডে আলোচিত ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল ভোর ৫টার দিকে চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যে এলাকা থেকে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামটি সীমান্তের পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে। ধারণা করা হচ্ছে, সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার রাত ১২টার পর কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামে কয়েক ঘণ্টা ধরে অভিযান চালায় র্যাব-১ এর একটি বিশেষ দল। পরে কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামের পরিবহন ব্যবসায়ী মনির চৌধুরীর বাড়ি থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তাদের ঢাকায় নেয়া হয়। আলোচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ঢাকার জুয়াড়িদের কাছে ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত।
এদিকে এ মুহুর্তে দেশের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট কীভাবে চৌদ্দগ্রামের অজয়পাড়ায় এসে গোপনে বসবাস করতে লাগলো-এ নিয়ে নানা গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। সম্রাট কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামের পরিবহন ব্যবসায়ী হাজী মুনির চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে লুকিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাব-১১ কুমিল্লা কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার প্রণব কুমার বলেন, শনিবার সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে র্যাবের ১২ থেকে ১৪টি গাড়ি কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামের আশপাশে অবস্থান নেয়। র্যাব বিভিন্ন সড়কের মধ্যে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
আলকরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক হেলাল বলেন, মুনির চৌধুরী ফেনীর মেয়র ও স্টার লাইন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী আলাউদ্দিনের ভগ্নিপতি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, স্টারলাইন গ্রুপের ব্যবস্থাপক ও ফেনীর মেয়র আলাউদ্দিনের সঙ্গে ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সুসম্পর্ক ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনে স্টারলাইন পরিবহনের কাউন্টার নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে সম্রাটের সহযোগিতা নিয়ে আলাউদ্দিন সমস্যাগুলো সমাধান করে।
এ বিষয়ে মেয়র আলাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন-সম্রাটের বাড়ি ফেনী। আমিও ফেনীর মেয়র। সেই হিসেবে তার সঙ্গে আমার পরিচয় রয়েছে। হাজী মনির সম্পর্কে আলাউদ্দিন বলেন, তিনি আমার ভগ্নিপতি। সম্রাট হাজী মনিরের দুঃসম্পর্কের আত্মীয়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, চৌদ্দগ্রামে বাড়ি হলেও মনির চৌধুরী ফেনীতে থাকেন। গত একসপ্তাহ ধরে ফেনী থেকে প্রায়-ই ওই বাড়িতে আসা-যাওয়া করছিলেন তিনি। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। মনির চৌধুরীর দোতলা বাড়ি। তারা বলছেন, মনির তার বাড়িতে আসা-যাওয়া কম করতেন। সম্প্রতি তার আসা-যাওয়া বেড়ে যায়। এমনকি দোতলা ওই বাড়িটির মূল ফটকও বন্ধ থাকে। এরপরও পেছনের দরজা দিয়ে ওই বাড়িতে আসা যাওয়া করতেন তিনি।
এর মাঝেই শনিবার রাত ৯টার দিকে র্যাবের কয়েকটি গাড়ি মনির চৌধুরীর বাড়ি ঘিরে ফেলে। পরে গভীর রাতে মনির চৌধুরীর দোতলার বাড়ির একটি কক্ষ থেকে ক্যাসিনো সম্রাট ও তার সহযোগী আরমান আলীকে বের করে নিয়ে আসেন র্যাব সদস্যরা। কয়েক ঘণ্টা পর তাদের নিয়ে ওই বাড়ি ত্যাগ করে র্যাবের গাড়ি।
শনিবার সন্ধ্যায়ও মনির চৌধুরী একবার তার ওই বাড়িতে এসেছিলেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় একাধিক সূত্র। মনির চৌধুরীর ভাতিজি সামিয়া জান্নাত বলেন, এক সপ্তাহ আগে আমি শ্বশুরবাড়ি থেকে এই বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। মনির চৌধুরীর দোতলা বাড়ি।‘সম্রাট ও আরমান এই বাড়িতে থাকতেন কিনা তা আমার জানা নেই। তবে সম্প্রতি মনির চাচা প্রায়ই আসা যাওয়া করতেন বাড়িতে। গতকাল সন্ধ্যায়ও তাকে দেখা গেছে।’
তিনি বলেন, রাতে হঠাৎ এই বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। এরপরই বাড়ি থেকে সম্রাট ও আরমানকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।
মনির চৌধুরীর প্রতিবেশী মো. জামাল ও মো. মারুফ বলেন, মনির চৌধুরী ফেনীতে ব্যবসা করেন। সেখানেই তিনি থাকতেন। এই বাড়িতে তার বৃদ্ধ মা ছাড়া কেউই থাকতেন না’। আলকরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জানান, ‘আমার এলাকার কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও তার এক সহযোগীকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে বলে শুনেছি।’