ক্যাসিনো বাদশাহ সম্রাটকে গ্রেপ্তার করায় খুশি তার স্ত্রী শারমিন চৌধুরী। গতকাল সম্রাটকে গ্রেপ্তারের পর তার ডিওএইচএস-এর বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। ওই বাসায় থাকেন শারমিন। অভিযান চলাকালে গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্রাট সম্পর্কে কথা বলেন তিনি। শারমিন বলেন, আমি ওয়েলকাম জানাচ্ছি। কারণ তাকে এত বড় পর্যায়ের নেতা বানানোর পরও সে অপকর্মে কিভাবে জড়িত হয়। এই অভিযান আরো আগে শুরু করলে ভালো হত। আপা এটা আরো আগে করলো না কেন? তিনি বলেন, সম্রাটের বাবা আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন।
সম্রাট হঠাৎ করে নেতা হয়নি। এটা আল্লাহ প্রদত্ত। গড গিফটেড। নেতৃত্ব দেয়া একটি গড গিফটেড বিষয়। আপনি আমি চাইলেই পাবো না। সম্রাট তার পদ পদবি সামাল দিতে পারেনি। হাতের মুঠো ভরে টাকা না দিলে এখন মাঠে নেতা কর্মীরা মিটিং মিছিলে আসে না। শারমিন চৌধুরী ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রী।
শারমিন বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে উনিশ বছর। আমাদের একটি ছেলে আছে। সে বিবিএ সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে বিদেশে আছে। গত দুই বছর ধরে সম্রাটের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই। সে যে গডফাদার এটাও আমি জানি না। আমি জানি সে যুবলীগের ভালো একজন নেতা। উত্তর দক্ষিণের সবাই জানে ও ভালো একজন নেতা। দুই বছর ধরে দূরত্ব থাকার কারণে আমি কিছুই জানি না। সে এত বড় একটি ক্যাসিনো চালায়! তার সম্পদ বলতে কিছুই নেই। ক্যাসিনো চালিয়ে সে যা আয় করে তা দলের জন্য খরচ করে। দল পালে। আর যেটা ওর কাছে থাকে সেটা দিয়ে সিঙ্গাপুর কিংবা এখানে জুয়া খেলে। তার জনপ্রিয়তা দেখে বোঝা যায় সে ক্যাসিনোর টাকা দিয়ে দলের ছেলেদের পালে। তার মতো এতো জনপ্রিয়তা কোন নেতার আছে? আর কোনো নেতার নেই। শুধু একমাত্র ইসমাইল হোসেন সম্রাটের আছে। উত্তরেও একজন নেতা আছে। তার তো এত জনপ্রিয়তা নেই। আমার সঙ্গে সম্রাটের বনিবনা কম ছিল। সে দলের ছেলেদের নিয়ে থাকতে বেশি পছন্দ করতো। ওর নেশা আছে জুয়া খেলার।
আমি সর্বপ্রথম প্রধানমন্ত্রীকে এই অভিযানের জন্য ব্যক্তিগতভাবে অনেক ধন্যবাদ জানাতে চাই। তিনি যদি আরো আগে এই উদ্যোগটি নিতেন তাহলে আরো ভালো হত। সম্রাট সিঙ্গাপুর জুয়া খেলতে যেত। জুয়া খেলা তার নেশা। বাড়ি-গাড়ি, সম্পত্তি ইত্যাদি করা তার নেশা না। টাকা পয়সা যেটা জমাতো সেটা দিয়ে সিঙ্গাপুরে সে জুয়া খেলে শেষ করতো। গত দুই বছর ধরে সে আমাকে সিঙ্গাপুর নেয় না। সিঙ্গাপুরে চায়না এবং মালয়েশিয়া বংশদ্ভুত এক নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে। সেখানে গেলে ওই নারীর সঙ্গেই সে সময় কাটায়। গত তিন থেকে চার বছর ধরে মূলত ক্যাসিনো চালু করেছে। এর আগে ক্যাসিনো ছিল না। এর আগে সে ঠিকাদারি করতো। দলের সকল নেতাদের সঙ্গে তার কিন্তু ভালো সম্পর্ক আছে। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ক্যাসিনো খালেদকে মাঝে মধ্যে আমি সম্রাটের অফিসে দেখতাম। তবে সম্রাট পছন্দ করতো না আমি কোনো নেতা কর্মীর সঙ্গে প্রকাশ্যে পরিচিত নই। কিংবা রাজনীতি করি না। সে চাইতো আমি সাধারণ গৃহিনী হয়ে থাকি। বিয়ের অনেক পরে আমি তার জুয়া খেলা সম্পর্কে জেনেছি। জুয়া খেলার যে এত বড় বড় জায়গা আছে সেটা আমার মাথায় ছিল না। তাদের পারিবারিক অবস্থা সম্পদের দিক আগে যেমন ছিল এখনও ঠিক তেমনই। শারমিন বলেন, আমি সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রী। আমার আগে যাকে বিয়ে করেছেন তার সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে। তিনি বাড্ডা থাকতেন।
তিনি বলেন, কাকরাইলে যে ফ্লোরে তার অফিস সেটা তার নিজস্ব অফিস। পুরোটা দখল করা না। তার অফিসের গেটে চেকিং সিস্টেম থাকাতে কেউ ওই অফিসে উঠতে চায়নি। তাই পুরো অফিসটি খালি হয়ে গেছে। তবে যে ফ্লোরে তার অফিস সেটাই শুধু তার নিজের ক্রয় করা। তার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা হচ্ছে মাসে কয়েকবার কথা হয়। আর মাঝে মধ্যে আমি তার অফিসে যাই। এখানে সে আসে না। কারণ সে ওপেনহার্ট সার্জারির রোগী। তার সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা নিষেধ। তাই আমি কাকরাইলে যাই। ক্যাসিনোর অভিযান শুরু হওয়ার পরে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। কারণ সে ভাবে আমি বোকা। আমি হয়তো জানলে তার বিষয়ে সত্য কথা বলে দিবো। এটা নিয়ে তার একটা ভয় ছিল। সূত্র: মানবজমিন।