সদরঘাটে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়

এক দিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এরই মধ্যে রাজধানী ছেড়ে নিজ বাড়িতে গেছেন অনেকে। তবে আজ শনিবার রাজধানীর সদরঘাটে ঘরে ফেরা মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়াগামী লঞ্চ এমভি রাজদূতের কেরানি আজিজুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল ঢাকা শহরের সব গার্মেন্টস ছুটি হওয়ায় আজ সকাল থেকে সদরঘাটে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। তবে বিকেল এ যাত্রীর সংখ্যা অত্যাধিক। মুহূর্তের মধ্যে যাত্রীতে ভরে যাচ্ছে লঞ্চে।
আজিজুল হক বলেন, গতকাল শুক্রবারও ডেকে ডেকে লোক তুলতে হয়েছে। তবে আজ লোকসংখ্যা বেশি হওয়ায় সবাইকে টিকেট ও কেবিন দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।
ফরিদুল নামের এক যাত্রী বলেন, তিনি ভোলায় পরিবার নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে যাচ্ছেন। সদরঘাটে আজ অত্যাধিক ভিড়। মিরপুর থেকে সদরঘাটে আসতে চার ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। আর এখন লঞ্চে উঠতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
পবিত্রা দাশ নামের এক নারী জানান, তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আজ শনিবার তাঁর অফিস ছুটি হওয়ায় গ্রামের বাড়ি বরগুনা যাচ্ছেন। সেখানে গিয়ে ছোটকালের বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবেন। তিনি বলেন, ঢাকায় চাকরি করার কারণে ছোটকালের বন্ধুদের সব সময় এক সঙ্গে পাই না। ঈদের সময় সবাই বাড়িতে যায়। তখন এক সঙ্গে মিলে ছোটকালের স্মৃতিচারণ করি।
আব্বাস উদ্দিন নামের এক যাত্রী বলেন, ঢাকার মুগদায় থাকি। পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে পটুয়াখালীতে যাব। কিন্তু সদরঘাটে আসার কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া চাচ্ছে দ্বিগুণ। তাই বাধ্য হয়ে গুলিস্তান থেকে রোদের মধ্যে ছোট সন্তানকে নিয়ে ভ্যানে করে এসেছি। কষ্ট হলেও সামনে পরিবার নিয়ে ঈদ করতে পারব, এটা অনেক মজার বলে জানান তিনি।
তৃষা নামের এক শিশু জানায়, ‘আমার দাদুর বাড়ি বরগুনার বেতাগীতে। আজ বাবা-মায়ের সঙ্গে সেখানে বেড়াতে যাচ্ছি। আমি গেলে দাদু লাল গরু কিনবে বলেছেন। অনেক খুশি লাগছে দাদুর বাড়ি যেতে।’
এমভি সুন্দরবন-২-এর টিকেট মাস্টার নাহিদ বলেন, আজ যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ। কেবিন অনেক আগে থেকেই বুকিং হয়ে আছে। মানুষ সিট না পেয়ে লঞ্চের ছাদে কাপড় বিছিয়ে যাচ্ছেন। তবে অতিরিক্ত যাত্রী আমরা নিচ্ছি না। সময় মতো সব লঞ্চ ছাড়া হচ্ছে।
হেঁটে হেঁটে সদরঘাট
ঈদের ছুটিতে রাজধানী ফাঁকা থাকলেও গুলিস্তান থেকে সদরঘাটে পশুর হাট ও ঘরমুখী যাত্রীদের চাপে গণপরিবহন সংকটের কারণে অনেকে হেঁটে হেঁটে লাগেজ ও ব্যাগ নিয়ে সদরঘাটে যাচ্ছেন।
দেখা যায়, রাজধানীর মালিটোলা থেকে পশুর হাট বসায় কোনো রিকশা বা গাড়ি প্রবেশ করতে পারছে না। এতে মানুষ বাধ্য হয়ে হেঁটে সদরঘাটে যাচ্ছেন।
হুমায়ূন নামের এক যাত্রী বলেন, গুলিস্তানে এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কোনো রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা না পাওয়ায় হেঁটেই রওনা দিয়েছি। কষ্ট হলেও বাড়িতে যেতে পারব, এটাই ক্লান্তি দূর করে দেয়।
কামাল নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘রায়সাহেব বাজার থেকে ধোলাইখাল পর্যন্ত দুই পাশে গরুর বাজার লাগছে। রিকশা চাইলেও নিতে পারি না। এক ট্রিপ দিতে লাগে দুই ঘণ্টার উপরে। মানুষ তো আর ভাড়া বেশি দেয় না। তাই আমরা যাইতে চাই না।’
অটোরিকশাচালক মাসুদ মিয়া বলেন, ‘ঢাকা শহর এমনিতে ফাঁকা। তবে সদরঘাট এলাকায় প্রচণ্ড জ্যাম। এক ট্রিপ দিয়ে এখন আরেক ট্রিপের জন্য বইসা আছি। এখানে এলে লস। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আসতে লাগে। আর অন্য দিকে যাওয়ার সময় কোনো যাত্রী পাই না।’