সোহেল হোসাইন: ইঞ্জি: আফতাব উদ্দিন খান পেশায় একজন ব্যবসায়ী ও সৌখিন মনের মানুষ। । আর তাই সৌখিনতা থেকে শুরু করেন জারবেরা নামক ফুলের চাষ। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়ায় জারবেরা ফুল চাষ করার জন্য তৈরি করেন একটি বাগান। আর সেই বাগানেই চাষ করছেন জারবেরা ফুলের। মাত্র তিন বছরেই সাফল্য পান তিনি । জনপ্রিয় এই ফুলের বানিজ্যিকভাবে চাষ করে ভাল আয়ও করছেন তিনি।
মানিকগঞ্জ পাটুরিয়ায় এক্সপ্রেক্টা ফ্লাওয়ার গার্ডেন নামের একটি বাগানে এই জারবেরা ফুলের বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা হচ্ছে । ২০১৩ সালে এই বাগানে পরীক্ষামূলক ভাবে জারবেরার চাষ শুরু করেন ব্যবসায়ী ইঞ্জিনিয়ার আফতাব উদ্দিন খান। শুরুতে এক বিঘা জমিতে চার রঙের জারবেরা ফুলের চাষ শুরু করেছিলেন । বর্তমানের এই বাগানে তিন বিঘা জমিতে ১০ রঙের জারবেরা ফুলের চাষ করা হচ্ছে ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে শীতকালে খোলা মাঠে বা উন্মুক্ত স্থানে চাষ করা হয় । আর গীষ্মকালে পলিথিনে করেও চাষ করা হয়ে থাকে । বেশি দিন ফুলদানিতে সতেজ রাখতে জারবেরার জুঁড়ি নেই। পানি নিষ্কাশিত উর্বর দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি জারবেরা ফুল চাষের জন্য উত্তম । এই জারবেরা ফুল চাষের জন্য জমিতে পরিমানমতো জৈব বা রাসায়নিক সার দিতে হবে। এরপর ৩৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার গভীর করে আড়াআড়ি ও লম্বাভাবে কয়েকটি চাষ দিয়ে জমির মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করে নিতে হবে। এতে সব জৈব পদার্থ মাটির সঙগে যথাভাবে মিশে যায়।
গতকাল সোমবার দুপুরে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যাওয়ার পথে আরসিএল মোড়ের পূর্ব পাশে এক্সপ্রেক্টা ফ্লাওয়ার গার্ডেনের জারবেরা ফুলের বাগানে কাজ করছেন দুইজন শ্রমিক। আর বাগানের পরিচালক(মেনাজার) আমিরুজ্জামান তা তদারকি করছেন । কথা হয় দুই শ্রমিক ও বাগানের মেনেজারের সাথে। বেশ ফুরফুরে আমেজ নিয়েই কাজ করছিলেন রিয়াজুল ও ছত্তার নামের এই দুই শ্রমিক।
ওই বাগানের শ্রমিক রিয়াজুল বাড়ি গোয়ালন্দ থানার অন্তরসুল গ্রামে। কাজ করেন এক্সপ্রেক্টা ফ্লাওয়ার গার্ডেনে। কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে প্রতিদিন পান ৩০০ টাকা করে। রিয়াজুল বলেন, অনেক দিন আগে থেকেই এই বাগানে কাজ করছি। ফুল গাছের বয়স একটু বেশি হওয়অতে ফুল উৎপাদন হার কিছুটা কম। তবে এখন সপ্তাহে দু’বার তোলা হয় আর পাইকারীভাবে প্রতিটি ফুল বিক্রি করা হয় ১০ টাকা করে।
তারা আরও জানালেন, এই বাগানে লাল ,হলুদ, সাদা, কমলা, ফিরোজ ও গোলাপীসহ প্রায় ১০ রঙের জারবেরা ফুলের চাষ করা হচ্ছে ।
বাগানে মেনেজার আমিরুজ্জামান বলেন, ২০১৩ সালে ভারতের পুনে থেকে পঁচা হাজার জারবেরা ফুলের চারা কিনে আনা হয়েছিল। আর এতে খরচ হয়েছিল চার লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা মতো। তবে প্রথম বছরে লাভের মুখ তেমন দেখা না গেলেও পরের বছরই ভালো লাভ হয়েছিল। পরের বছর(২০১৪ সালে)আরও পাঁচ হাজার জারবেরা ফুলের চারা আনা হয়। এরপর ফুল চাষ করার জন্য জমি তৈরি, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা কীটনাশক ও দুইটি সেট বানানো হয়। এতে প্রথমেই আনুমানিক খরচ হয়ে যায় প্রায় ৩২ লাখ টাকা। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে তিন বিঘা জমিতে জারবেরার চাষে ভালই আয় হচ্ছে । আর বাগানের গাছ থেকে সপ্তাহে দু’বার ফুল তোলা হয়ে থাকে। প্রতি সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ফুল রাজধানীর শাহবাগের বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি জারবেরা ফুল গড়ে দশ টাকা করে সপ্তাহে ষাট হাজার টাকার ফুল বিক্রি করা হয়। এ হিসাবে অনুযায়ী বছরে প্রায় ২৯ লাখ টাকার জারবেরা ফুল বিক্রি করা হয়। সব খরচ বাদে বছরে প্রায় ১২ লাখ টাকার মতো লাভ থাকে।
শিবালয় উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জারবেরা ফুল চাষ লাভজনক বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জমি ও ফুল চাষের সেট তৈরিসহ প্রাথমিক অবস্থায় এই ফুল চাষে তুলনামূলক কিছুটা খরচ বেশি হয়। তবে বনিজ্যিকভাবে জারবেরা চাষে অন্যান্য ফুল ও ফসলের তুলনায় আয়ও অনেক বেশি হয়। ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই জারবেরা ফুলের চাষ বাড়ছে। কৃষক ও বেকার যুবকেরা জারবেরা চাষে আয়ের সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন বলেও তিনি জানান।
এই জারবেরা ফুল সারা বছরই লাগানো যায়। তবে উন্নত ফুল ও বেশি ফলন পেতে অক্টোবর -নভেম্বর মাসে লাগানো উচিত । সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে গাছে ফুল ধরে । একটি জারবেরা ফুল গাছ থেকে তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত ফুল আহরণ করা যায়।
সব খবর/মানিকগঞ্জ/শিবালয়/১৬ জানুয়ারী ২০১৮/সোহেল