রাসূলের তরিকায় চলো আল্লাহর হুকুমে

কাজী সিকান্দার : প্রতিটি কাজেরই উদ্দেশ্য থাকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদত করার উদ্দেশ্যে। আমাদের সৃষ্টি, আমাদের বেড়ে ওঠা, আমাদের এত নেয়ামত ভোগ করার পেছনে একটি কাজ আছে তা হল আল্লাহতায়ালার ইবাদত করা। মনিবের গোলামি করা। তাবলিগ করা সেই মনিব, সেই মালিক ও সৃষ্টিকর্তার একটি দায়িত্ব। কেউ যদি তাবলিগ করে তবে সে এমন কোনো বড় কাজ করেনি বরং সে আল্লাহর দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র।

আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর প্রত্যেকই দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (বুখারি) তবে দায়িত্ব আদায় করার জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে পুরস্কৃত হবে।

তাবলিগের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষ বা জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসা। কুফর অন্ধকার, বেদআত অন্ধকার, কুসংস্কার অন্ধকার, আল্লাহর হুকুম না মানা অন্ধকার, পাপ অন্ধকার, তাগুত অন্ধকার, এমনি সব অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। ইমান একটি আলো, সুন্নাত একটি আলো, সওয়াব একটি আলো, আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের তরিকা মতো চলা একটি আলো। এ আলোর প্রতি আহ্বান করে বান্দাকে সত্যের ওপর উঠানো।

আল্লাহতায়ালা বলেন, হে নবী! এটি একটি কিতাব যা আমি আপনার প্রতি নাজিল করেছি যেন আপনি লোকদের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন পরাক্রমশালী প্রশংসার যোগ্য পালনকর্তার নির্দেশে তারই পথের দিকে। (সূরা ইবরাহিম-১)

আল্লাহ হচ্ছেন তাদের বন্ধু যারা ইমান এনেছে। তিনি তাদের অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনেন। আর যারা কুফরি করে তাদের বন্ধু হল শয়তান। সে তাদের আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায় (সূরা বাক্বারা ২৫৭)।

অন্ধকার থেকে দাওয়াত দিয়ে আলোর দিকে এনে আকিদা বিশ্বাস এবং আমলের পরিশুদ্ধ করতে হবে। যখন বান্দা ইমানের পথে, সৎপথে এসেছে তখন তাকে আমল ও ইমানের পরিপূর্ণতার দাওয়াত দেবে। এখানে দাওয়াতের উদ্দেশ্য হবে তার আমল যেন ঠিক হয়ে যায়।

আল্লাহতায়ালা বলেন, হে ইমানদাররা! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং আনুগত্য করো রাসূলের। আর তা না করে তোমাদের আমলগুলো বাতিল নষ্ট করো না (সূরা মোহাম্মাদ ৩৩)।

আল্লাহর ইবাদতের আনুগত্যের পাশাপাশি তাগুতকেও ছাড়তে হবে। ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করতে হবে। তোমরা পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করো। এ ক্ষেত্রে দাওয়াতের উদ্দেশ্য তাগুত ছাড়া। খালেস ইসলামে প্রবেশ করা।

আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে এ জন্যই রাসূল পাঠিয়েছি যে, একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করো এবং সব তাগুত থেকে দূরে থাক (সূরা নাহ্ল-৩৬)।

হক ও বাতিলের পার্থক্য করা হল তাবলিগের আরেক উদ্দেশ্য। দাওয়াতের মধ্যেমে হক আর বাতিল স্পষ্ট করে দিতে হবে। মানুষ যেন কোনটি সত্য, কোনটি হক আর কোনটি মিথ্যা ও নাহক বাতিল বুঝতে পারে।

আল্লাহতায়ালা বলেন, এ কোরআন সত্য পথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্যকারী (সূরা বাকারা-১৮৫)।

সর্বোপরি দাওয়াতের উদ্দেশ্য হবে যেন মানুষ জাহান্নাম থেকে বের হয়ে জান্নাতি হয়ে যায়। সব মানুষ হেদায়েত পেয়ে যায়। মুমিনের হালতে দুনিয়া ত্যাগ করতে পারে। কেয়ামত ও আল্লাহর ভয় যেন সৃষ্টি হয় মানুষের অন্তরে। দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর ভয়, জাহান্নামের ভয় তৈরি হয়। তখন বান্দার আমল করা সহজ হয়ে যাবে। জান্নাতের দিকে আগ্রহী করে তোলা। দুনিয়ার অসাড়তা যেন স্পষ্ট হয় মানুষের সামনে।

আল্লাহতায়ালা বলেন, হে ইমানদাররা! তোমরা নিজেদের এবং নিজ পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর। যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর (সূরা তাহরীম-৬)।

হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো এবং ভয় করো এমন দিনকে যখন পিতা-পুত্রের কোনো কাজে আসবে না এবং পুত্রও পিতার কোনো উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদের ধোঁকায় না ফেলে এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদের প্রতারিত করতে না পারে (সূরা লুকমান-৩৩)। আমরা আল্লাহকে রাজি ও খুশি করার উদ্দেশ্যেই তাবলিগ করব। আল্লাহতায়ালা আমাদের দাওয়াত দেয়ার ও বেশি বেশি আমল করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ
আশরাফবাদ, ঢাকা -১২১১
Kazisikandar83@gmail.com
(১০ জানুয়ারি ২০২০, দৈনিক যুগান্তর)