‘যৌন সহিংসতা’ মানে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের ফিরতে পারবে না: জাতিসংঘ

Rohingya people are seen at a camp in Teknaf on August 21, 2019. (Photo by MUNIR UZ ZAMAN / AFP)

রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলমান রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর যৌন সহিংসতা যুদ্ধাপরাধের শামিল। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন এমন তথ্য জানিয়ে বলছে, শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার অনুকূল পরিস্থিতি মিয়ানমারে নেই। মিয়ানমারের জাতিসংঘের তথ্য-অনুসন্ধানী মিশন জানিয়েছে, পুরুষ, বালক, হিজড়া, শিশু, নারীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিয়মিত এবং পরিকল্পিত ধর্ষণ, গণধর্ষণ, সহিংস ও বলপূর্বক যৌনতা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ভয়ানক লঙ্ঘন।-খবর এএফপি ও আল-জাজিরার

প্রতিবেদনে বলা হয়, নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের শাস্তি দিতে ও আতঙ্কিত করতে যৌন এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ‘যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যাসহ এসব কার্যক্রম আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অপরাধ।’ ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন শুরু হলে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার এসব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে দ্বিতীয় উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি নেয়ার পরও রোহিঙ্গারা ফিরতে আগ্রহী না হওয়ায় প্রত্যাবাসন শুরুর দ্বিতীয় চেষ্টাও ঝুলে থাকল অনিশ্চয়তায়। রাখাইনের গ্রামে গ্রামে হত্যা-ধর্ষণ আর ব্যাপক জ্বালাও পোড়াওয়ের মধ্যে প্রাণ হাতে করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গারা ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত চারটি শর্তের কথা বলছেন।

তাদের দাবি, প্রত্যাবাসনের জন্য আগে তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। জমি-জমা ও ভিটেমাটির দখল ফেরত দিতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাখাইনে তাদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেজন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন রোহিঙ্গাদের এই অনাগ্রহকে দুঃখজনক বলেছেন। আর জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছ্বায় ফেরা নিশ্চিত করতে হলে তাদের মধ্যে আস্থা তৈরির বিকল্প নেই।

নিউইয়র্কে দেয়া এক বক্তৃতায় জাতিসংঘের তথ্য-অনুসন্ধানী মিশনের রাধিকা কুমারস্বামী বলেন, নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের পরিবেশ নিরাপদ না।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা তাদের গ্রামে ফিরে যাবে না। পুরুষ, বালক ও হিজড়াদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার ঘটনায় চারপাশের নিরবতা ভাঙতে হবে।

জাতিসংঘের মিশন বলছে, উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন রাজ্য ও পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইনের কয়েকশ যৌন সহিংসতা থেকে বেঁচে যাওয়া ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাতকার নিয়েছে মিশন।

আগামী মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সংখ্যালঘুর স্বীকৃতি দেয়নি। তাদেরকে বাঙালি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যদিও কয়েক প্রজন্ম ধরে তারা মিয়ানমারে বসবাস করছেন।

রাধিকা বলেন, সামরিক কৌশল হিসেবে যৌন সহিংসতাকে ব্যবহার করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এটা তাদের কৌশলের অংশ। কিন্তু রোহিঙ্গা এলাকায় এটা এতই ভয়ঙ্কর হিংস্র ও নৃশংস যে এতে বোঝা যাচ্ছে তারা এই সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে।

নিপীড়নে জড়িতদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে না পারার ব্যর্থতার জন্য মিয়ানমারের নিন্দা জানিয়েছে তথ্য-অনুসন্ধানী মিশনের প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে দায়মুক্তি ও মেনে নেয়ার পরিস্থিতি থেকেই এমন সহিংসতা সম্ভব। কারণ সেখানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর শাস্তি কিংবা শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি হওয়ার কোনো যৌক্তিক ভয় নেই।

তবে মিয়ানমার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি, রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের হামলার জবাবে উত্তর রাখাইনের গ্রামে সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শত শত নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ৮০ শতাংশ ছিল গণধর্ষণ। আর এসব গণধর্ষণের ৮২ শতাংশের জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দায়ী। সূত্র: যুগান্তর।