প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যুই প্রাধান্য পাবে৷ বাংলাদেশ সরকার মনে করে, তিস্তার পানি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সদিচ্ছার ঘাটতি নেই৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, মমতা ব্যানার্জিকে এবার তিনি রাজি করাতে পারবেন কিনা৷
বৃহস্পতিবার চার দিনের সফরে ভারতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এটা দ্বিপাক্ষিক সফর নয়৷ শেখ হাসিনা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডাব্লিউইএফ)-এর ভারতীয় শাখা ইন্ডিয়ান ইকোনমিক ফোরাম-২০১৯ এ যোগ দিতে যাচ্ছেন৷ তবে এই সফরে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা হবে৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে শেখ হাসিনার বৈঠক হবে ৫ অক্টোবর৷ ওইদিন বিকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি৷
দ্বিতীয় মেয়াদে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার এটাই প্রথম ভারত সফর৷ ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী এরইমধ্যে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘তিস্তা ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হবে৷ তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে আমরা কোনো ধারণা পোষণ করতে পারছি না৷” ভারতের সাথে বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্য, যোগাযোগসহ ৮-১০টি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে৷
জানা গেছে, মোদীর সাথে শেখ হাসিনার বৈঠকে ৭টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনসংক্রান্ত কমিটি গঠন, গঙ্গা ব্যারাজ ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য যৌথ কমিটি গঠন এবং আবহাওয়া পূর্বাভাস সংক্রান্ত সহযোগিতা প্রাধান্য পাবে৷ তাই তিস্তা ইস্যুটিই সামনে থাকছে৷
১৯৮৭ সালের পর থেকে তিস্তার পানি নিয়ে ভারতের সাথে কোনো চুক্তি নেই বাংলাদেশের৷ একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত৷ ফলে বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকায় পানিসংকট চলছে৷ ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর ঢাকা সফরে তিস্তা পানি চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিরও তখন ঢাকা আসার কথা ছিল৷ কিন্তু মমতা শেষ পর্যন্ত আসেননি৷ তিস্তা চুক্তিও হয়নি৷ ২০১৫ সালে মমতা একাই ঢাকায় এসেছিলেন৷ আর ঢাকায় বসেই তিনি তিস্তার পানি দেয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন৷ তার কথা, তিস্তায় দেয়ার মতো পানি নেই৷ পরিবর্তে তিনি তোর্সা নদীর পানিবণ্টনের প্রস্তাব দেন৷
মোদী সরকার প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসেই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আন্তরিকতা দেখায়৷ কিন্তু ভারতের আইন অনুযায়ী, কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিলেই হবে না৷ রাজ্যের অনুমোদন লাগবে৷ এবার দ্বিতীয় দফায় মোদী সরকার আরো শক্তিশালী এবং মমতা ব্যানার্জি আগের চেয়ে দুর্বল বলে মনে করা হচ্ছে৷ তাহলে এবার কি চিস্তার পানি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ?
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে যাচ্ছেন ভারতে৷ সেখানে সাইড লাইনে ভারতের সাথে বসবেন৷ এটা কোনো সামিট মিটিং না৷ সামিট মিটিং হলে আমরা বলতে পারতাম কিছু হবে৷ তিস্তা নিয়ে কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আমি দেখছি না৷ এজন্যই তো ওরা এখন অভিন্ন সাতটি নদীর কথা বলছে৷ আর মমতা ব্যানার্জিকে তো রাজি করাতে হবে৷ তিস্তায় পানি আনতে হলে সিকিম থেকে আনতে হবে৷ আর সিকিম থেকে দিল্লি পানি আনবে না৷ এখানে নানা ধরনের রাজনীতি আছে৷”
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি মনে করি, এবার যদি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে দিল্লি বড় আকারে সাপোর্ট দেয়, দিল্লি মিয়ানমারকে যদি আরো চাপ দেয় তাহলে সেটাই শুনতে আমরা পছন্দ করব৷”
অন্যদিকে সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক বলেন, ‘‘মমতা ব্যানার্জি রাজনৈকিভাবে দুর্বল হয়ে গেছে মনে করা ঠিক না৷ আসামে এনআরসি করে শেষ পর্যন্ত হিন্দুরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এটা মোদী সরকারের জন্য বুমেরাং হয়েছে৷ তাই চাপে ফেলে মমতার কাছে থেকে তিস্তার পানি আনা সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না৷ আর মোদী সরকার আন্তরিকভাবে তিস্তার পানি দিতে চায় বলে আমার মনে হয় না৷ ভারতীয় পত্রপত্রিকায় নেতাদের বক্তব্য দেখে তাই বোঝা যায়৷ এদিকে বিহারে সমস্যা হচ্ছে, তিস্তা ব্যারাজের কারণে৷ তাই আমি কোনা আশা দেখছি না তিস্তা নিয়ে৷”