মাইন উদ্দিন জমাদার/অহিদুর রহমান: “সৌরবিদ্যুতের আলো মিটিমিটি করে জ্বলে। এটা কোন শক্তিশালী বিদ্যুৎ নয়। সাধারন বিদ্যুৎ খরচের তুলনায় এই বিদ্যুতের খরচ চার থেকে পাঁচগুন বেশী। ফলে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপ উপজেলার গরীব ও অসহায় মানুষগুলোর মরার উপর খরার ঘা হয়ে চেপে বসেছে সোলার বিদ্যুৎ। আমরা এই বিদ্যুৎ চাইনা। আমাদের দাবী একটাই, জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ চাই।” ৫ জুন, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় চরফ্যাসনস্থ মনপুরা বাসীর ব্যানারে চরফ্যাসন ন্যাশনাল ব্যাংকের সামনে সদর রোডে মানববন্ধনে উপস্থিত ‘জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ চাই আন্দোলন নাগরিক কমিটি’র নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
বঙ্গোপসাগরের কোলঘেষে জেগে ওঠা একটি দ্বীপ উপজেলা মনপুরা। জেলা সদর থেকে এখানকার দুরত্ব প্রায় ৮০ কি.মি.। এখানে প্রায় দেড় লক্ষ লোকের বসবাস। বাসিন্দাদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ জেলে, কৃষক এবং দিনমজুর। সকল ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত এই জনপদের মানুষের প্রধান সমস্যা বিদ্যুৎ। উপজেলা সদরে প্রায় ৮ শতাধিক গ্রাহক সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়ে আসলেও উপজেলার বাকি ৩টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা বছরের পর বছর ধরে বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত ছিল। এই দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে প্রথমে উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নে সোলার মিনি গ্রীড স্থাপন করে গ্রাহকদের মাঝে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। পরে বাকি দুইটি ইউনিয়নেও দুইটি সোলার মিনি গ্রীডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে গ্রাহকদের মাঝে।
গ্রাহকরা প্রথমে ভেবেছিল যেহেতু সূর্যের আলো ব্যবহার করে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম সস্তাই হবে। কিন্তু সেই সোলার বিদ্যুৎ এখন মানুষের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে ১ ইউনিট বিদ্যুত বাবদ খরচ নিচ্ছে ৩০ টাকা। একজন গ্রাহক প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফ্যান ও বাতি এবং একটি ফ্রিজ ব্যবহার করলে তাকে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। অনেক গ্রাহক’কে আরো বেশীও হয়। বিদ্যুৎ বিল বেশী হওয়ার কারনে অনেকে প্রয়োজন থাকা সত্বেও লাইট বন্ধ করে রাখে। প্রচন্ড গরমের সময় অধিক বিলের ভয়ে ফ্যান না চালাতেও দেখা গেছে। অনেকে দিনের বেশির ভাগ সময়ে ফ্রিজের লাইন বন্ধ করে রাখেন। বিলের সাথে প্রতি মাসে ৭০ টাকা সার্ভিস চার্জ বাধ্যতামূলকতো রয়েছেই। বিদ্যুৎ বিল দিতে দিতে গ্রাহকদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহন করা মানুষগুলো জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ দাবী করে বলেন, দেখুন আমরা মনপুরাবাসী কতবড় বৈষম্যের স্বীকার। পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে ফরিদপুরের দূর্গম চরে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ গিয়েছে। সেখানে মাত্র ১০ হাজার পরিবার তবুও সেখানে বিদ্যুৎ গেল। এছাড়া ভোলা সদরের ভবানীপুর, মেদুয়া ও কাচিয়া চর। তজুমদ্দিন উপজেলার মলংচরা, সোনাপুর, চর জহিরউদ্দিন, চর মোজাম্মেল ও চর আবদুল্লাহ। চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরি-মুকরি ও মুজিবনগর সহ দেশের ১৬টি চরে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়ার কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। অথচ দেড়লক্ষ লোকের আবাসভূমি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা একটি উপজেলা হওয়া সত্বেও সাবমেরিন ক্যাবলের আওতায় আসেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব শতবর্ষে সবগুলো চরে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন।
কিন্তু অদৃশ্য একটি শক্তির কারনে সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হচ্ছেনা এই উপজেলায়। তারা চাচ্ছেন, পুরো মনপুরায় সোলার মিনি গ্রীডের মাধ্যমে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে। এটা বাস্তবায়ন হলে এখানকার মানুষ ৩০ টাকা প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিল দিতে না পেরে বিদ্যুতের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে। এবং একটা সময় তারা বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত হয়ে পড়বেন বলে আশংকা করছেন সচেতন মহল।
মানববন্ধনে ব্যানার, ফেস্টুন ও লিফলেট নিয়ে বিভিন্ন মানুষ অংশগ্রহন করে তারা আরও বলেন, বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ খাতের সাফল্য তাৎপর্যময় ও প্রশংসনীয়। সরকার নিরলসভাবে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন করে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে গ্রামগুলিও বিদ্যুতের আওতায় আসছে। কিন্তু প্রায় ৫ শতাধিক বছরের পুরোনো এই দ্বীপের মানুষ এখনো নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত। আমরা সোলার বিদ্যুৎ চাইনা, চাই জাতীয় গ্রীডের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ।
মোঃ জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সোনালী ব্যাংক চরফ্যাসন শাখার ম্যানেজার, মনপুরার কৃতি সন্তান মোঃ কামরুল ইসলাম ও মোঃ জোবায়েদ হোসেন বক্তব্য রাখেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মোঃ ফখরুল ইসলাম, মোঃ জোবায়ের হোসেন, মোঃ নিজাম উদ্দিন, মোঃ মোস্তাফিজ, মোঃ কায়েস চৌধুরী, মোঃ আারিফ হোসেন, মোঃ জসিম, মোঃ নুর আলম শামীম, মোঃ হারুন, বিকাশ চন্দ্র শীল, মোঃ নোমান, মোঃ কিরণ, মোঃ শাহিন চৌধুরী, মোঃ তুষার, মোঃ আল আমিন, মোঃ আরিফ, মোঃ সৌরভ, মোঃ হৃদয়, মোঃ শাহিন, মোঃ জসিম, মোঃ সুজন, মোঃ তারেক, প্রভাষক মোঃ ছালাউদ্দিন, সহকারী শিক্ষক মোঃ হাসানুজ্জামান, মোঃ পারভেজ, মোঃ নুরনবী সেলিম, মোঃ রিয়াজ চৌধুরী, মোঃ মাকসুদ, মোঃ রুবেল সহ চরফ্যাসনস্থ মনপুরার বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।
উক্ত মানববন্ধনে শীর্ষবাণী ও চট্রলা নিউজ এর সম্পাদক ও প্রকাশক মুহাঃ নুরুল আমিন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন, চরফ্যাসন উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও চরফ্যাসন রেসিডেন্সিয়াল মডেল মাদ্রাসার পরিচালক অধ্যাপক মোঃ কামরুজ্জামান, ইয়ুথ পাওয়ার ইন বাংলাদেশ চরফ্যাসন উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ মনির আসলামী, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম একাত্মতা পোষন করেন।