সোহেল হোসাইন: মানিকগঞ্জ পৌরসভার অধিকাংশ সড়কই ভাঙাচোরা। এসব সড়কে চলতে গিয়ে লোকজনকে নিয়মিত ভোগান্তির শিকার হতে হয়। সংস্কার না হওয়া, বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে এসব সড়ক চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ বেল্লাল হোসেন বলেন, গত বছর বন্যায় ও অতিবৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটের বেশ ক্ষতি হয়েছে। এসব রাস্তা সংস্কার করার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু পৌরসভার নিজস্ব কোন অর্থ না থাকায় সময় মতো রাস্তাগুলো সংস্কার করা সম্ভব হয় না। এজন্য ৩৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারী মানিকগঞ্জের এই পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপরে ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ এটি দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নতীকরণ করা হয়। পৌর এলাকায় জনসংখ্যা ও যানবাহন বেড়েছে অনেক। কিন্তু সেই অনুযায়ী বাড়েনি রাস্তাঘাট।
সূত্রে জানায়, ৪২ দশমিক ৩৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মানিকগঞ্জ পৌরসভার জনসংখ্যা প্রায় আড়াই লাখেরও বেশি। আর পৌরসভার মোট রাস্তার দৈর্ঘ ২৯৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৭৫ কিলোমিটারিই কাঁচা। বাকি রাস্তার মধ্যে কার্পেটিং ১১০ কিলোমিটার, আরসিসি ৭ কিলোমিটার ও ইট বিছানো রাস্তা রয়েছে মাত্র ৫ কিলোমিটার।
গত তিন দিনে পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডের ঘুরে অন্তত ১৫ জন পৌর নাগরিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও লোকজন পৌরসভার কাছ থেকে কাঙ্খিতমানে সেবা পাচ্ছে না। জেলা শহরের প্রধান শহীদ রফিক সড়কটি একেবারেই সরু। সড়কটিতে ইজিবাইক ও রিক্সা চলাচলের কারণে দিনের অধিকাংশ সময় যানজটের কবলে পড়তে হয়। রাস্তাঘাট বেহাল থাকায় দুর্ভোগ যেন নিত্যসঙ্গী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশ দিয়ে জয়রা মোড়, শিববাড়ি থেকে হিজুলীর ডায়াবেটিস হাসপাতাল মোড়, পশ্চিম দাশড়া এলাকায় রিজার্ভ ট্যাংক থেকে শান্তনু রাস্তা হয়ে সিংগাইরের মোড়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে মনরা থেকে নতুন বসতি পর্যন্ত সড়কে অবস্থা খুবই খারাপ। এসব সড়কে অধিকাংশ স্থানে পিচ উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও জেলা শহরের সেওতা ও পশ্চিম সেওতা এলাকায় মৃতপ্রায় খালের পাশের অধিকাংশ স্থানে সিসি ব্লক ও মাটি ধসে পড়েছে। এতে আধাঁপাকা(আরসিসি)সড়কটির খালের পাশের অংশ ধসে পড়ে গেছে। সেখান দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ছোট যানবাহন চলাচল করছে।
মানিকগঞ্জ সদর উজেলার কয়েকজন ডায়াসেটিস রোগীরা বলেন, প্রায়ই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যেতে হয় মানিকগঞ্জ পৌরসভার হিজুলী এলাকার ডায়াবেটিস হাসপাতালে। শিববাড়ি থেকে হিজুলী পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই বেহাল। যাতায়াতের সময় ঝাঁকনিতে খুবই খারাপ লাগে। কিন্তু কিছুই করার নেই।
এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে জয়রা মোড় পর্যন্ত সড়কটি সবচেয়ে বেশি খারাপ। সড়কের পাশের বাসিন্দা মনরা এলাকার রাসেল বলেন, দিনে অতিরিক্ত মালবাহী ট্রাক আর রাতে মাটির ট্রাক চলাচল করায় পুরো সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহন চলাচলের সময় সড়কের আশেপাশে ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। হাঁটতেও অনেক কষ্ট হয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক(সুজন)জেলার সাধারণ সম্পদাক ইকবাল হোসেন বলেন, প্রত্যেক ওয়ার্ডের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা কাউন্সিলরদের দায়িত্ব। পৌর এলাকাতে নাগরিকদের চলাচলের সুবিধার্থের বেহাল রাস্তাগুলোকে দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।
পৌরসভার মেয়ল গাজী কামরুল হুদা সেলিম সব খবরকে জানান, বছর দেড়েক ধরে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বিগত সময়ে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের আমলে অপরিকল্পিত নগরায়ণ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অধিক জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে সংস্কার করা হচ্ছে। সরকারিভাবে বরাদ্দ পেলে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সড়ক ও রাস্তাঘাট মেরামত করা হবে বলেও তিনি জানান।
সব খবর/মানিকগঞ্জ/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/সোহেল