বিশেষ প্রতিবেদক: দলের প্রধান খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। সারা দেশের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও দলীয় অফিসে হাজার হাজার ই-মেইল ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে খালেদা জিয়ার অবস্থা জানতে চাইছেন নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। দেশে বিভিন্ন দূতাবাস ও মিশন প্রধানরাও খালেদার অবস্থার খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া যেকোনো দিন বিদেশে যাচ্ছেন বলে গতকাল সারা দেশে আলোচনা চলছিল। চিকিৎসার জন্য তিনি বিদেশে গেলে বিএনপির নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়বেন না বলে তাঁদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, স্বাস্থ্যের অবস্থা পুরোপুরি ভালো হলে তিনি দেশে ফিরে আসবেন সে প্রত্যাশা তাঁদের রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, খালেদা জিয়া বিএনপির ‘ঐক্যের প্রতীক’ হয়েই থাকবেন বলে মনে করেন তাঁরা।
তা ছাড়া গত তিন বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই লন্ডন থেকে দল পরিচালনা করছেন। ফলে সেদিক থেকেও বিএনপির অসুবিধা নেই বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকার অনুমতি দিলে করোনায় পরবর্তী জটিলতার উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া যেকোনো দিন লন্ডন অথবা সিঙ্গাপুরে যাবেন। তিনি চলে গেলে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা আর ঢাকায় থাকছেন না। দলটির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা তারেক রহমান ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকেই লন্ডনে বসবাস করছেন।
খালেদা জিয়ার বিদেশ চলে যাওয়া নিয়ে হতাশা না থাকলেও তাঁর স্বাস্থ্যের প্রকৃত অবস্থা অনেক নেতাকর্মীর কাছে স্পস্ট নয় বলে মনে হয়েছে। কারণ গত কয়েক দিনে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দু-একজন চিকিৎসকের করা ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভেতরে-বাইরে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। প্রতিদিনই বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল এবং তিনি ভালো আছেন। সর্বশেষ গত দুই দিনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি চেয়ারপারসনের শ্বাস-প্রশ্বাসে অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে এবং তিনি করোনা-পরবর্তী জটিলতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।
তবে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা বিষয়টি নিয়ে তাঁরা তেমন বিচলিত নন। এর আগে ২০১৫ ও ২০১৭ সালে লন্ডন সফরে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডনে গিয়ে প্রায় আড়াই মাস পর তিনি দেশে ফেরেন। ওই সময় তাঁর চোখে অপারেশন করা হয়েছিল। বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার কেউই তখন ঢাকায় ছিলেন না।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা গত একযুগের বেশি সময় ধরে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে টিকে আছেন। হতাশা থাকলেও তাঁরা সেটি এখন কাটিয়ে উঠে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে নিতে জানেন। তিনি বলেন, ‘ঐক্যের প্রতীক খালেদা জিয়া পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, তিনি বিএনপির অনুপ্রেরণা হয়েই থাকবেন।’ তা ছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকনির্দেশনায় বিএনপি ভালোভাবেই এগিয়ে চলছে বলেও দাবি করেন মির্জা ফখরুল।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ম্যাডাম বিদেশে চলে গেলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ রোগমুক্তি ঘটলে বিদেশে বসে থাকার মতো নেতা তিনি নন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দেশে চলে আসবেন। কিন্তু আমাদের মূল লক্ষ্য হলো তাঁর চিকিৎসা। তাঁকে বাঁচাতে হবে।’
খালেদা জিয়ার সাময়িক অনুপস্থিতিতে বিএনপিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন এই নেতা। কারণ হিসেবে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম অনেক দিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তারেক রহমান ভালোভাবেই দল পরিচালনা করছেন। তা ছাড়া তিনি তো চিরদিনের জন্য বিদেশে যাচ্ছেন না।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি হতাশ হবে কেন? দল তো তারেক রহমানই চালাচ্ছেন। তা ছাড়া ম্যাডাম দলের ‘সিমবোল’ হিসেবে আছেন এবং যত দূরেই যান, সেটা থাকবেন।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন বলেন, ‘ম্যাডামের জন্য আমাদের আবেগ, উৎকণ্ঠা, দূঃখ-কষ্ট সবই আছে। কিন্তু তিনি বাইরে গেলে আমাদের ক্ষতি হবে না। কারণ তিনি ফিরে আসবেন সেই মানসিক প্রস্তুতি আমাদের আছে। হতাশা নয়; ম্যাডাম আমাদের মধ্যে আবারও ফিরে আসবেন সেই আশাবাদ নিয়েই আমরা থাকতে চাই। তা ছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থাকায় দল পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটবে না’ বলেন ডাকসুর সাবেক এই জিএস। সূত্র: কালের কণ্ঠ।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের মতে, ‘খালেদা জিয়া বিদেশে গেলে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ ম্যাডাম অনির্দিষ্টকালের জন্য যাচ্ছেন না।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ম্যাডামের চিকিৎসা। তিনি সেরে উঠলে সবার কাছে আবার ফিরে আসবেন। তা ছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দল চালাচ্ছেন। ফলে নেতাকর্মীদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই।’