বাংলাদেশে নাকি ব্যাপক হারে হিন্দু নির্যাতন বেড়েছে, দখল করে নেয়া হচ্ছে তাদের ঘরবাড়ি ও মন্দির। তাই এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার দাবিতে দিন কয়েক আগে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি নেতাদের কাছে ধর্ণা দিয়েছেন বাংলাদেশের হিন্দু মহাজোট দলের নেতারা। রোববার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ভারতের ‘যুগশঙ্খ’পত্রিকাটি।
প্রতিবেদনে ‘যুগশঙ্খ’ জানায়, গত ১৪-১৭ আগস্ট কলকাতা, আগরতলা ও দিল্লিতে বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের নেতাদের তিনটি প্রতিনিধি দল ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং চরমপন্থি হিন্দু দল আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও হিন্দু জাগরণ মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করে তাদের ওপর তথাকথিত নির্যাতনের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের দুই নেতা মিলন ভট্টাচার্য ও গঙ্গেশচন্দ্র দাস দিল্লিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আন্তর্জাতিক সম্পাদক প্রশান্ত হরতালকার এবং আরএসএসর নিখিল নামতকারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
কলকাতায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিনহা, সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়সহ একাধিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন হিন্দু মহাজোটের মানিক দে, মিঠু রঞ্জন দে, গোপাল পাল, দীপক কর, সুজন সরকার, পলাশচন্দ্র সরকার রবীন ঘোষ ও লাকি বাছাড়রা। এছাড়া আগরতলায় বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বিজন সানা ও সাংসদ প্রতিভা ভৌমিকসহ একাধিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন মহাজোটের নেতা রিপন দে।
এই বৈঠকের কথা স্বীকারও করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামাণিক। গত রোববার তিনি ‘যুগশঙ্খ’ পত্রিকাার প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন নিয়ে ভারতের বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন এবং বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। আমরা তাদের বলেছি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সামনে প্রিয়া সাহা যা বলেছেন, তা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। এই দেশকে হিন্দুশূন্য করার চক্রান্ত চলছে।’
তার আরো অভিযোগ, আগামীতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো মৌলবাদী হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ভবিষ্যতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই আগেভাগেই তিনি ভারতের হিন্দু নেতাদের সাহায্য চাইলেন।
তার ভাষায়, ‘কিন্তু আমরা হিন্দু বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে চাই না। আমরা এখানে পূর্ণ নিরাপত্তা নিয়ে থাকতে চাই।’
তিনি আরও বলেন,‘তাঁরা জানিয়েছেন আমাদের পাশে সবসময় আছেন। তাঁরা বলেছেন, প্রয়াত সুষমা স্বরাজও হিন্দু নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। মোদী সরকার অবশ্যই বিষয়টি দেখবেন। প্রয়োজনে একটি টিম পাঠানো হতে পারে যারা সরজমিনে বিষয়টি দেখে রির্পোট দেবে। আমরা সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া সমস্ত নির্যাতনের তথ্য তাঁদের হাতে দিয়ে এসেছি। দাবি করেছি, ভারত সরকার উদ্যোগি হন বাংলাদেশের হিন্দুদের রক্ষা করতে।’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন,‘ওরা আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণ হচ্ছে। ওরা সব সময় ভয়ে থাকেন। পরিস্থিতির উপর আমরা নজর রাখছি। অবশ্যই ওনাদের সহযোগিতা করব আমরা। সংশ্লিষ্ট জায়গায় বিষয়টি আমি বলব।’ আরএসএসের দক্ষিণ বঙ্গের প্রান্ত প্রচারক বিপ্লব রায় বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশের সংস্কৃতিটা ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। সেখানকার বুদ্ধিজীবীরাও প্রতিবাদ করছেন। হিন্দু শূণ্য করার অপচেষ্টা করছে একটা মহল। বর্তমান ভারত সরকারকে চাপে রাখতেই এই অত্যাচার বাড়ছে। আমরা চাই বাংলাদেশের হিন্দুরা দেশ ছেড়ে আসবেন না। তাঁদের ওখানেই নিরাপত্তা দিয়ে রাখতে হবে।’