প্রধানমন্ত্রী যাতে নোবেল পুরস্কার না পান, সে জন্য ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আবরার হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। শনিবার বিকেলে নগরের হালিশহরে একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিভিন্ন ওয়ার্ডের স্থানীয় সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড অবশ্যই দুঃখজনক। তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এটা যারা করেছে তাদের কাছে তো দলের কোনো নির্দেশনা ছিল না। তারা অতি উৎসাহী হয়ে করেছে। এখন খুঁজে বের করতে হবে তাদের দিয়ে এ কাজটা কেউ করিয়েছে কি-না। শান্তিতে নোবেল প্রাইজ পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামটিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় ছিল। যেদিন নোবেল কমিটি নোবেল প্রাইজ ঘোষণার জন্য বসেছে, সেদিন কিন্তু এ কাজটি হয়েছে। এখানে তো দুরভিসন্ধি থাকতে পারে। ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত থাকতে পারে। যাতে উনি নোবেল প্রাইজটা না পান।’
সিটি মেয়র বলেন, ‘আবরারের হত্যাকাণ্ডের পর সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। কাউকে বাদ দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইতিমধ্যে ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর কী করতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে বলেছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হবে। এরপরও এটা নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে।’
আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সেবা সংস্থার মাধ্যমে এক লাখ কোটি টাকার প্রকল্প এই শহরে দিয়েছেন। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সময় দরকার আছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে গেলে ভোগান্তিও হবে। এটা বাস্তবতা। ভোগান্তিটা হচ্ছে উন্নয়নের প্রসব বেদনা। প্রসবের কি যন্ত্রণা তা মা ও বোনেরা জানেন। সন্তান যখন পৃথিবীতে আসেন মুহূর্তে যন্ত্রণা ভুলে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন। এখন নগরবাসী যে যন্ত্রণাটা ভোগ করছেন এটা হলো উন্নয়নের প্রসব বেদনা। উন্নয়নটা আপনি-আমি ভোগ করে যেতে পারব না হয়তো। পরবর্তী প্রজন্মের জন্যই কিন্তু এ উন্নয়ন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা নিরাপদ বাসযোগ্য নগর আমরা তৈরি করছি।’
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহুরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে ও পতেঙ্গা থেকে কাট্টলী পর্যন্ত আউটার রিংরোডের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামে আর যানজট থাকবে না।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘বেসরকারি কনটেইনার ডিপোর কারণে চট্টগ্রাম নগরের গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর সড়কে ভয়াবহ যানজট হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর উপদেষ্টা কমিটির সভায় দেড় বছরের মধ্যে এগুলো সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আড়াই বছর পার হলেও এগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়নি। বন্দর এলাকায় একটি হাসপাতাল নেই। অথচ এখানে লাখ লাখ শ্রমিক ইপিজেডে কাজ করেন। এখানকার কয়েক লাখ বাসিন্দা অসুস্থ হলে দূরের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটতে হয়। অনেক মা যানজটের কারণে সড়কে সন্তান প্রসব করেছেন- এমন নজিরও আছে। সিডিএ নগরের সল্টগোলায় মার্কেট করেছে কিন্তু কোনো হাসপাতাল করেনি। সেবা সংস্থার অবহেলা ও গাফিলতির কারণে সাধারণ মানুষ যাতে উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত না হয় সে জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন, চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মো. মাহফুজুল হক, পতেঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম ইসলাম ও বন্দরথানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াসসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।