সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) : কাল বৈশাখীর ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার রসুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি। চার কক্ষ বিশিষ্ট বাঁশের বেড়ার ওপর টিনের ঘরটি ভেঙ্গে পড়ায় বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। অতিসত্ত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে নিভে যাবে বিদ্যালয়ের আশে পাশের ১০ গ্রামের শিক্ষার আলো।
বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে স্থানীয় কিছু সচেতন মানুষ রসুলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে গড়ে তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলেন রসুলপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বদলে যায় এই এলাকার শিক্ষার চিত্র। গ্রামের শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে অনায়াসেই ভর্তি হতো নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিতে।
২০১৪ সাল থেকে বিদ্যালয়টিতে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয় এবং গজারিয়া জেবুন্নেছা পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের আওতায় অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন শুরু করে। বিদ্যালয়টি এই জনপদের দূর্গম পাহাড়ী এলাকা অফিসটিলা, মোহাম্মদপুর, রহমতপুর, হলুদিয়া, আঁধার মানিক চা বাগান, মেস্ত্ররীগোনা, পানুয়া, জলন্তী ও নয়দোলংসহ দশটি গ্রামের শিক্ষার্থীদের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক বলেন, ভবনটি লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ৪৫০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ভবন ঠিক না হলে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছেনা। এই সমস্যা ছাড়াও বিদ্যালয়টি রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। দীর্ঘ ২৩ বছর অতিবাহিত হলেও বিদ্যালয়টি এখনও এমপিও ভুক্ত হয়নি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অবৈতনিক ভাবেই পাঠদান করছেন।
তিনি আরো জানান, গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যালয়টি ধ্বসে পড়লে উপজেলা পরিষদ থেকে সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা অনুদানের আশ্বাস দেওয়া হয় যা কিনা এখনো হাতে পাওয়া যায়নি। এর আগে পাহাড়ী প্রবল বর্ষণের ফলে ধ্বসে পড়েছিল বিদ্যালয়ের তৎকালীন মাটির দেয়ালের ঘরটি। ওই সময় দেয়াল ধ্বসে বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছিল। পরে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ওই খবর ছাপা হলে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপক কুমার রায় এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌস হোসেন বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে সাড়ে চার লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি সেমি পাকা ভবন তৈরির আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদ কর্তৃক আরো দুই লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানানো হয় যা কিনা এখনো পাওয়া যায়নি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো: ইউসুফ মিয়া জানান, স্কুলটিতে নেই কোন ভালো স্যানিটেশন ব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা। মাত্র চার কক্ষ বিশিষ্ট ঘরটিতে চারশত পঞ্চাশজন শিক্ষার্থীকে পাঠদান দেওয়া হতো। স্কুলটিতে রয়েছে নয় জন শিক্ষক, একজন আয়া এবং একজন পিয়ন। বলতে গেলে এক রকম অবৈতনিক ভাবেই পাঠদান করেন এই সব শিক্ষক। নেই কোন স্থানীয় অনুদান। শিক্ষার্থীদের বেতন এবং ৪৩ বিজিবি ব্যাটলিয়ন রামগড় কর্তৃক প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা অনুদানেই চলতো বিদ্যালয়ের যাবতীয় ব্যয়। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের এই গ্রামটিতে শিক্ষার আলো পৌছে দিতে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির এই বাজারে আমাদের জীবন যাপন ও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় আবু সুফিয়ান বলেন, “ইসকুলডি ওইবার পরতে (পর থেকে) আমরার পোলামাইয়াডি (ছেলে মেয়েরা) লেহাপড়া করে। গেরামে (গ্রামে) মেলা শিক্ষিত পোলামাইয়া হইছে, এডা দেহে আমার কুব (খুব) ভালা লাগে। এল্লাইগ্যা (এ জন্যে) আমরার সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই ইসকুলডি পাকা করনের লাইগা।”
বাগান বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুস্তম আলী বলেন, রসুলপুর গ্রামটি আমার ইউনিয়নের দূর্গম এলাকায় অবস্থিত পিছিয়ে পড়া একটা এলাকা। রসুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্তিসহ প্রয়োজনীয় ভবন পাকাকরণ এখানকার সময়ের দাবী। শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌস হোসাইন বলেন, বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে সাড়ে ছয় লক্ষ টাকার দুটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আশা করি তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়াও সুযোগ আসলে বিদ্যালয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
সব খবর/ চট্টগ্রাম/ ১৪ মে ২০১৮/ লিটন