কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসা মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় ওসি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মেয়েটির স্বজনরা। ফলে বিচার পাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে।
মামলা ও ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভুরুঙ্গামারী উপজেলার জয়মনিরহাট ইউনিয়নের বাউশমারী গ্রামের ফরহাদ হোসেনের শ্যালক হাফিজুর রহমানের সঙ্গে সদর ইউনিয়নের কামাত আঙ্গারিয়া গ্রামের জহির উদ্দিন চকিদারের মেয়ে রওশনারার বিয়ে হয়। গত ১৪ আগস্ট ফরহাদ হোসেনের মেয়ে বাউশমারী ফাজিল মাদ্রাসার
ছাত্রী ফাহিমা খাতুন (১২) ওই বাড়িতে বেড়াতে যায়। গত বুধবার দুপুরে মোবাইল ফোনে ফাহিমা বাবাকে বলে তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে। বাবা তাকে বিকেলে নিয়ে আসার কথা জানান। তবে এর ঘণ্টাখানেক পর আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফোন করে বলা হয়, ফাহিমা অসুস্থ।
পরে ফাহিমার মামা হাফিজুর রহমান, মা মর্জিনা ও বাবা ফরহাদ হোসেন আত্মীয়ের বাড়ি গেলে তাদের জানানো হয়- মেয়েটি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। বিষয়টি মানতে নারাজ তার স্বজনরা। ফাহিমার মা-চাচিরা জানান, তাদের মেয়ের গোপনাঙ্গে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে দেখেছেন তারা। সেখানে কাপড় দিয়ে বন্ধের চেষ্টাও করা হয়েছে।
খবর পেয়ে ভুরুঙ্গামারী থানা পুলিশ ফাহিমার মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। ঘটনার দিন রাতেই মেয়েটির বাবা ফরহাদ হোসেন থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ অপমৃত্যু মামলা নেয়। এ ঘটনা শুনে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এলাকার তিন শতাধিক মানুষ থানায় আসে মামলা নেওয়ার দাবিতে। তবুও মামলা নেননি ওসি।
এ ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে প্রথমে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফাহিমার বাবা। তিনি বলেন, মেয়ে আমাকে ফোন করে তাকে আনতে বলে। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম কিছু একটা হয়েছে। তার কিছুক্ষণ পরে আবার ফোন দিয়ে জানানো হয় মেয়ে অসুস্থ। আর গিয়ে দেখি লাশ। এখন বুঝি বিচারও পাব না। তবে ওই ঘটনার খবর দিতে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে কে ফোন দিয়েছিল, তার নাম-পরিচয় এখনও কেউ জানাতে পারেননি।
জয়মনিরহাট ইউনিয়ন পরিষদ ৫ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, এলাকার অনেক লোক থানায় যায় মামলা নেওয়ার দাবিতে। তবুও পুলিশ মামলা নিল না। দুঃখজনক ঘটনা।
মেয়েটির মামা হাফিজুর রহমান জানান, তার ভাগ্নির আত্মহত্যার প্রশ্নই আসে না। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যা পরিকল্পিত। তিনি ধারণা করছেন, তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন কিংবা অন্য কেউ এ নির্মমতার সঙ্গে জড়িত।
তবে হাফিজুর রহমানের স্ত্রী রওশনারা দাবি করেন, খাওয়া শেষে ফাহিমা ঘুমাতে যায়। সেখানে সে নিজে ফাঁসি নিয়েছে। ঘরের দরজা ভেঙে একজনকে সঙ্গে নিয়ে রশি কেটে তাকে নামানো হয়েছে।
হাফিজুর রহমানের শ্বশুর জহির উদ্দিন চকিদার বলেন, আমার তিন ছেলে বাইরে ছিল। আমিও বাইরে ছিলাম। ঘটনা শুনে দৌড়ে বাড়ি আসি।
ভুরুঙ্গামারী থানার ওসি ইমতিয়াজ কবির জানান, প্রাথমিকভাবে ফাহিমার আত্মহত্যার লক্ষণ পাওয়া গেছে। গলায় দাগ রয়েছে। এ ব্যাপারে অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছাত্রীর পরিবারের ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা কেন ঘটনাটিকে হত্যা বলছে তারাই জানেন। ছাত্রীর গোপনাঙ্গে রক্তক্ষরণের বিষয়ে ওসি বলেন, এ বয়সের মেয়ের এরকম হয়। হয়তো পিরিয়ডের রক্ত। আর রক্তের জন্য সেখানে কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। সূত্র: সমকাল।