বিশেষ প্রতিবেদক : এটি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা উত্তরখন্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র। যমুনা নদীর পাশে অবস্থিত বিদ্যালয়টি যেকোন সময় চলে যেতে পারে নদীগর্ভে। নদীতে চলে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় দুইশত শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন।
শুধু বিদ্যালয়টিই নয় যুমনার ভাঙনের মুখে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা ও একটি কবরাস্থান। নদী ভাঙনের হাত থেকে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি মামুন হাওলাদার জানান, প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি রক্ষার আর কোনও সুযোগ নেই। ভাঙনের যে অবস্থা তাতে স্কুলটি রক্ষায় কোনও পদক্ষেপই নেওয়া সম্ভব নয়।’
তিনি জানান, ‘যমুনা নদীর ভাঙন থেকে বাচামারা এলাকাকে রক্ষা করতে ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যা চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
৪৪নং বাচামারা উত্তরখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিক্তা আক্তার জানান, ‘তিন বছর ধরে বিদ্যালয়টি ভাঙনের আশঙ্কার কথা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার চিঠি লেখা হলেও তারা ভাঙন রোধ কিংবা ভবন স্থানান্ততরে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এখন বিদ্যালয়টি রক্ষাসহ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’
তিনি আরও জানান, ১৯৬৯ সালে স্থাপিত এ বিদ্যালয়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয়ে করে দ্বিতল ভবন করা হয়েছিল। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করে।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. শহিদ মোল্লা জানান, গত বর্ষায়ও বিদ্যালয়টি হুমকির মুখে ছিল। তখন বিদ্যালয়টি স্থানান্তর ও ভাঙনরোধের ব্যবস্থা নিতে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে রেজুলেশন আকারে দেওয়া হয়েছিল। জনপ্রতিনিধিদের কাছেও আবেদন করা হয়েছিল, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানান, যদি সময় মতো পদক্ষেপ নেওয়া হতো তাহলে শিক্ষার্থীদের ও ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকতো না। যমুনায় ঝুলে আছে বিদ্যালয়ের নতুন দ্বিতল ভবনটি।
বাচামরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ জানান, জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেললে স্কুলের ভবনটি রক্ষা সম্ভব। এই এলাকাটির ভাঙন ঠেকাতে সাড়ে ৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, যা হেড অফিসে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এরইমধ্যে ২০/২৫ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
দৌলতপুর উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল বারেকের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান, স্কুলের দ্বিতন ভবনটি নিলামের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় মসজিদের সভাপতি ইউছুব আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তাদের টিনের নির্মিত মসজিদটি ভাঙন থেকে রক্ষায় স্থানীয়দের সহায়তায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা থেকে মসজিদ রক্ষা করতে শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে পারেনি এলাকাবাসী। মসজিদ রক্ষার জন্য সবাই মিলে টিন বেড়া খুলে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, মসজিদের পাশেই রয়েছে উত্তরখন্ড কবরাস্থান ও মাদ্রাসা। মাদ্রাসাটিতে ১০০ শিক্ষার্থীকে নুরানী পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা দেয়া হয়। ভাঙন ঠেকানো না গেলে মাদ্রাসা ও কবরাস্থানটিও নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
সব খবর/ মানিকগঞ্জ/ ২১ মে ২০১৮/ লিটন