হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, দাউদকান্দিতে ২০ যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করে পারভেজ মিয়া পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) পেয়েছিলেন। এ ছাড়া আইজিপির পক্ষ থেকে তাকে নগদ টাকা ও মোটরসাইকেল দেওয়া হয়। এই কনস্টেবল দুর্ঘটনায় পড়ার পরও পুলিশ বিভাগ তার পাশে রয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের ভবেরচর থানার ওসি কবির আহমেদ খান বলেন, পারভেজকে চাপা দেওয়া কাভার্ডভ্যানটি পালিয়ে গেছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সেটি কিছুটা শনাক্তও করা হয়েছে। তবে গাড়ির নম্বরটি বোঝা যাচ্ছে না। দায়ী গাড়ি ও চালককে আটক করতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
কাঁদতে কাঁদতে মহিউদ্দিন বলছিলেন, তার ভাই শুধু দাউদকান্দিতে বাসযাত্রীদেরই উদ্ধার করেননি, মানুষের বিপদে তিনি সব সময়েই ঝাঁপিয়ে পড়েন। মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পরিশ্রম করেন। কিন্তু সেই মহাসড়কেই বেপরোয়া গাড়ির চাকায় তাকে নিজের পা হারাতে হলো।
পারভেজের ছোট ভাই মহিউদ্দিন মিয়া জানান, তার ভাইয়ের ডান পা একেবারে থেঁতলে গিয়েছিল। বাঁ হাতের হাড়ও ভেঙে গেছে। পঙ্গু হাসপাতালে সাত ব্যাগ রক্ত দেওয়া হলেও উন্নতি হচ্ছিল না। একপর্যায়ে চিকিৎসকরা তার ভাইয়ের প্রাণ বাঁচাতে ডান পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। মঙ্গলবার দিনভর অপারেশন করে বিকেলে তার থেঁতলানো পা বিচ্ছিন্ন করেন চিকিৎসকরা। অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে সন্ধ্যায় তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছে।
একজন স্বজন জানান, পারভেজ সোমবার জামালদীতে হাইওয়ে পুলিশের সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণ সেন্টারের পাশেই ডিউটি করছিলেন। ইফতারের কিছুক্ষণ আগে বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ডভ্যান তাকে ধাক্কা দেয়। তিনি ছিটকে পড়লে ভ্যানের চাকা তার ডান পায়ের ওপর দিয়ে উঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ভ্যানটি পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে গজারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। সেখান থেকে রাতে তাকে ঢাকায় পুলিশের কেন্দ্রীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও ওই রাতেই পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুরে চাঁদপুরগামী যাত্রীবাহী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডোবায় পড়ে গেলে তীরে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ তা দেখছিলেন। নোংরা পানিতে যাত্রীদের কেউ উদ্ধার করতে নামেননি। সে সময় মহাসড়কের পাশে মানুষের জটলা থেকে এগিয়ে গিয়েছিলেন দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা পুলিশ কনস্টেবল পারভেজ মিয়া। তিনি আর বিলম্ব করেননি, ইউনিফর্ম পরেই পানিতে নেমে পড়েন। জানালা ভেঙে, নোংরা পানিতে ডুব দিয়ে একে একে ২০ যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করেন তিনি। দুই বছর আগে বীরত্বপূর্ণ এমন কাজ করা সেই কনস্টেবলই সড়ক দুর্ঘটনায় এবার নিজের পা হারালেন। গত সোমবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার জামালদী বাসস্ট্যান্ডের সামনে তিনি দুর্ঘটনায় পড়েন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) তার ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে। সূত্র: সমকাল।