ঝোপে ফেলে যাওয়া কন্যাশিশু নতুন মায়ের কোলে

ফুটফুটে নবজাতক, সড়কের পাশে ঝোপে পড়ে কাঁদছিল। নাকে-মুখে পেঁচানো স্কচটেপ; বাঁ পায়ে কিছুটা ক্ষত। ক্ষীণ কণ্ঠের ‘ওয়া-ওয়া’ স্বর নিজের মা-বাবার কানকে নাড়া দিতে না পারলেও ঠিকই মা পেয়েছে সে। জহুরা আক্তার নামের এক নারী সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় নবজাতকটির সন্ধান পেয়ে পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিজের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

ঘটনাটি বৃহস্পতিবার সকালের, কুমিল্লা-নোয়াখালী সড়কের লাকসাম ভাটিয়াবিটা এলাকার ঝোপের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কান্নার শব্দ শুনে এগিয়ে যান জহুরা আক্তার। কাছে গিয়ে দেখেন ফুটফুটে এক মেয়েশিশু। চিৎকারের সঙ্গে ছোট্ট দুটি পা ছুড়ছে সামনে-পিছে। হাত দু’টো মুঠোবন্দি।

পরে খবর দেয়া হলে লাকসাম থানা-পুলিশ নবজাতকটিকে উদ্ধার করে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয় তাকে।

অবশেষে নবজাতকটি খুঁজে পেয়েছে মায়ের কোল। সড়কের পাশ দিয়ে যেতে জহুরা আক্তার নামের যে নারী কান্না শুনেছিলেন, তিনিই পরম মমতায় কোলে তুলে নিয়েছেন।

শুক্রবার দুপুরে জহুরা-মেহেদী দম্পতি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে জানান, নবজাতকটির দেখভালের দায়িত্ব নিতে চান তারা। পরে বিকেল ৪টায় জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে এই দম্পতির কোলে তুলে দেয়া হয় নবজাতকটিকে।

লাকসাম থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, খবর পেয়ে ফোর্স পাঠিয়ে ঝোপের ভেতর থেকে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেয়া হয়। শুক্রবার ভাটিয়াবিটা এলাকার মেহেদী হাসান ও তার স্ত্রী বাচ্চাটির দায়িত্বভার নিয়েছেন।

মেহেদী হাসান লাকসাম পৌরসভার ভাটিয়াবিটার মৃত জহিরুল হকের ছেলে। তিনি সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেন। মিনজাহুল হাসান মাহি নামে ৯ বছর বয়সী তাদের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। সে ভাটিয়াবিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।

সরেজমিনে শুক্রবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, মা জহুরা আক্তার শিশুটির পরিচর্যা করছেন।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমিই প্রথম শিশুটিকে ঝোপে কান্না করতে দেখতে পাই। পরে পুলিশকে খবর দেই। আমার স্বামীকে বলার পর তিনি রাজি হন। খুশি মনে সব প্রক্রিয়া শেষে বাচ্চাটিকে আমরা নিয়েছি। এখন মানুষের মতো ওকে গড়ে তুলব। সবাই দোয়া করবেন।’

কুমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নবজাতকটি শঙ্কামুক্ত। বাঁ পায়ে কিছুটা ক্ষত রয়েছে। কয়েকদিন হাসপাতালে থাকলে তা ঠিক হয়ে যাবে।

নবজাতকটির ‘বাবার’ দায়িত্বভার গ্রহণ করা মেহেদী হাসান বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে আমি তাকে আমার সন্তানের মতোই লালন-পালন করে বড় করব। কোনো দিনই সে মা-বাবার অভাব বোধ করবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘কন্যার নাম রেখেছি জান্নাতুল মাওয়া। আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের পরামর্শে নামটি রাখা হয়েছে।’

জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম পাটোয়ারি বলেন, ‘মেহেদী হাসানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নবজাতকটিকে তার হেফাজতে দেয়া হয়েছে। লাকসাম সমাজসেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের পর উপজেলা চেয়ারম্যান ইউনুস ভূইয়ার সঙ্গে কথা বলে বাকি আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।’