জাতিসংঘ সম্মেলন: নতুন পৃথিবীর ইশতেহার

হাসান আল বান্না : সদ্য সমাপ্ত হলো ৭৪তম জাতিসংঘ অধিবেশন। ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৭৪টি সম্মেলন করেছে আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি। মূলত বিশ্বকে যুদ্ধমুক্ত করতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই সংস্থাটি, কিন্তু কার্যত বরাবরই সাম্রাজ্যবাদ আধিপত্যবাদীদের ক্রীড়নক হিসেবে জাতিসংঘ কাজে করেছে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই। গতবছর আমি প্রায় পাঁচ হাজার শব্দে লিখেছিলাম ” শান্তিময় বিশ্ব গড়তে জাতিসংঘের ভূমিকা ” শিরোনামে। সেখানে জাতিসংঘের সংস্কার ও গতিশীল বিশ্ব সংস্থা গড়তে কিছু প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনা দিয়েছিলাম। যা ঢাকা ও কলকাতার কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। যেহেতু আন্তর্জাতিক সকল বিষয়বস্তু ও ঘটনাপ্রবাহের প্রতি বরাবরই আমার বিশেষ আগ্রহ সুতরাং পূর্ব থেকেই আমার ধারণা ছিল, এবারের জাতিসংঘ সম্মেলনে নতুন কোন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। ফলে ব্যক্তিগত এবং অফিসিয়াল নানাবিধ ব্যস্ততার সত্ত্বেও সম্মেলনের আগাগোড়া প্রতিটি কার্যক্রমের প্রতি ছিল আমার তীক্ষ্ণ নজর।
এবারে জাতিসংঘ সম্মেলনের পূর্বেই টানা পরপর ঘটে গেল বিশ্বে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিশেষ করে, ভারতের সংবিধান থেকে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার ৩৭০ ধারা বাতিল, কিছুদিন আগেই মালোশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের তুরষ্ক সফর, তুরষ্কের প্রধানমন্ত্রী রজব তাইয়েব এরদোয়ানের রাশিয়াই ঝটিকা সফর, জাতিসংঘ সম্মেলনের ঠিক আগমুহূর্তে তুরস্কের রাজধানীর আঙ্কারায় অনুষ্ঠিত রাশিয়া, ইরান ও তুরষ্কের সম্মেলন, চীনের সিল্কবেল্ট রোডের পরিকল্পনা, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নির্বাচনে হারার আশঙ্কায় জর্ডান উপত্যকা দখলের হুমকি এবং হুমকির পরবর্তী মুসলিম বিশ্ব বিশেষ করে তুরষ্ক, পাকিস্তান, ইরান ও সৌদি আরবের তীব্র প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি হুমকি ইস্যুতে মক্কায় অনুষ্ঠিত হলো ওআইসি’র সদস্যভুক্ত দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন। সুতরাং উপরোক্ত নানা ঘটনাপ্রবাহ থেকে পূর্ব থেকেই অনুমেয় ছিল বিশ্বে নতুন বিপ্লবের পদধ্বনি। গত কদিন আগেও লিখেছিলাম “নয়া বিপ্লবের পদধ্বনি ” শিরোনামে” যে সম্ভাবনায় এবারের জাতিসংঘ সম্মেলনে এর ঐতিহাসিক প্রতিফলন দেখলাম।

জাতিসংঘ সম্মেলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিন বিশ্ব নেতা এরদোয়ান, মাহাথির ও ইমরান খানের তোরজোর ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তারা নিউইয়র্কের হোটেল স্যুটে একাধিকবার একান্তে মিটিং করেন। বিশ্ব সংকট সমাধানে ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন বার্তা দিতে তারা বদ্ধপরিকর। জাতিসংঘ ভাষণে তিন নেতার কমনকিছু ইস্যুতে একসুরে বক্তব্য ছিল ঐতিহাসিক বার্তা। তারা ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, রোহিঙ্গা, বিশ্বে ইসরাইলের সন্ত্রাসবাদ, বিশ্বে ইসলামী বিরোধী প্রপাগাণ্ডা বা ইসলাম ফোবিয়ার বিরুদ্ধে তাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিল পৃথিবীর জন্য নতুন বার্তা। জাতিসংঘ সম্মেলনের সবশেষে তিন নেতার বৈঠক থেকে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসে তা ছিল আরেকটি ঐতিহাসিক চমক তা হচ্ছে, তুরষ্ক, মালেশিয়া ও পাকিস্তান তিন রাষ্ট্রের যৌথ প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক ইসলামী টেলিভিশন চ্যানেল। মুসলিম বিশ্বের মুখপাত্র হিসেবে বিবিসি, সিএনএন এর আদলেই শক্তিশালী টেলিভিশন চ্যানেল হবে। যা বিশ্বে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, ইসলামের বিরুদ্ধে প্রপাগাণ্ডা ও বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শক্ত আওয়াজ তুলে ধরবে।

জাতিসংঘ সম্মেলনে তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট রিসিপ তাইয়েপ এরদোয়ান ফিলিস্তিন ইস্যুতে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, আল আকসা মুসলমানদের ইস্যু এটা কেবল ফিলিস্তিনের একার ইস্যু না। ফিলিস্তিন ইস্যুতে কাউকে পরওয়া করিনা। ফিলিস্তিনের পাশে ঐক্যবদ্ধ ও জোড়ালোভাবে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ইসরায়েলের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বকে জানিয়ে বলেছেন, ইসরাইল ১৯৪৮ সালের পূর্বে এখানে কোন ইহুদী বসতি বা ইহুদী সাম্রাজ্য ছিল না। জাতিসংঘ মোড়কে বৃটিশরা ১৯৪৮ সালে এই ভূঁইফোড় রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা করেন। যা বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্র বিন্দু। আইএস প্রতিষ্ঠা করে ইসরাইল মধ্য প্রাচ্যের সীমানা পরিবর্তন করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু মুসলিম বিশ্ব তা কখনোই হতে দিবেনা। সাথে কাশ্মীর ইস্যুতেও জোড়ালো বক্তব্য রাখেন এবং কাশ্মীর কখনও ভারতের অংশ ছিলনা, এটা আলাদা স্বাধীন ভূখণ্ড এবং তাদের সকল মানবিক ও স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে বলে কাশ্মীরী জনগণের পক্ষে কাজ করার ও পাশে থাকার ঘোষণা দেন।

মালোশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদ একই সুরে ইসরাইলকে সন্ত্রাসবাদের আখড়া ঘোষণা দেন। তিনি সুস্পষ্ট একটি লাইন বলেছেন যা আমার হৃদয় কেড়েছে : ISRAEL – THE ORIGIN OF TERRORISM. এরপর মাথাথির বলেন, ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখল করে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা ও ৯০ শতাংশ আরব জনসংখ্যাকে উচ্ছেদ করার মধ্যেই আধুনিক সন্ত্রাসবাদের শেঁকড় প্রোথিত। যখন থেকে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন থেকেই অনেক দেশ যুদ্ধে জড়িয়েছে। যাদের অনেকেই ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত। এখন আমাদের মধ্যে যে সন্ত্রাসবাদ আছে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার আগে তা বর্তমানের মতো এতো ব্যাপক ও বিস্তৃত আকারে ছিল না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ কখনোই সফল হবে না। আমাদের এর কারণ বের করে তা সমূলে উৎপাটন করতে হবে। কিন্তু ক্ষমতাধররা (রাষ্ট্ররা) তা কখনোই চায় না।’
‘ইসরায়েল তৈরির কারণে সেখানে ইসলাম এবং মুসলিম বিরোধী শত্রু তৈরি হয়েছে। গোটা বিশ্বে মুসলিমরা কিছু না করলেও তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। সবখানে মুসলিমরা নির্যাতিত এবং নিজের দেশ থেকে বিতাড়িত হচ্ছে। তাদের কেউ আশ্রয়ও দিচ্ছে না।’

মাহাথির আরো বলেন, ‘প্রতি বছর হাজার হাজার মুসলিম সাগরে প্রাণ হারাচ্ছে। কেউ এটা অস্বীকার করতে পারবে না যে আগে এত প্রকটভাবে অভিবাসী সঙ্কট ছিল না। বর্তমানে যুদ্ধ এবং অস্থিরতার কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে তারা। এটা নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই।’
বিশ্বনেতাদের সামনে মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, ‘বন্ধুরা সব আইনের ঊর্ধ্বে, তাদের সব কিছু করার সুযোগ থাকে। তাই বোধহয় ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ও বৈশ্বিক মূল্যবোধকে আঙ্গুল দেখানোর পরও তাদেরকে সবাই সমর্থন দিচ্ছে এবং তাদের পক্ষে কথা বলছে। এই পৃথিবীতে এখন কোনো ন্যায়বিচার নেই।’

এবার আসি পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বক্তব্য বিষয়ে। ইমরান খানের বক্তব্য ইতিমধ্যে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। একজন নেতা কি পরিমাণ দেশ প্রেমিক হলে এমন বক্তব্য দিতে পারে ইমরানের বক্তব্য তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। জাতিসংঘ বক্তৃতার সময় তার বাচনভঙ্গি, বক্তব্যের আবেগ, তথ্যপ্রমাণের সমাহার, দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি, উন্নত ইংরেজি শব্দমালা সবমিলিয়ে একজন দেশপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রী ও মুসলিম বিশ্বের প্রতি দায়বদ্ধ বিশ্ব নেতার বক্তব্য যা হওয়ার কথা তার চেয়েও বেশি। সবমিলিয়ে বলা যায়, ৭৪তম জাতিসংঘ সম্মেলনে ইমরান খানের বক্তব্যে জাতিসংঘের ইতিহাসে সেরা বক্তব্য বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

ইমরান খানের বক্তব্যে বিষয় ছিল চারটি। তার দৃষ্টিতে বিশ্বের এখন মূল সমস্যা চারটি।
১. জলবায়ু ২. তার নিজ দেশ সহ উন্নয়নশীল ও বিশ্বের দারিদ্র্য পীড়িত দেশ সমূহ থেকে পশ্চিমা বিশ্বে টাকা পাচার ৩. ইসলাম ফোবিয়ার ৪. বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ ও কাশ্মীর ইস্যু। সত্যিকার অর্থে বিশ্বের মৌলিক সমস্যা সমূহের এই চারটি ইস্যু খুবই গুরত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্বায়নে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়বে যে সকল রাষ্ট্রে তাদের অধিকাংশ রাষ্ট্রই উন্নয়নশীল ও দারিদ্র্য পীড়িত। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের সৃষ্টিকারী রাষ্ট্র সমূহ হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের ধনী রাষ্ট্র সমূহ। সুতরাং এর বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে পশ্চিমা বিশ্ব ও জাতিসংঘ সহ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

বিশ্বের দ্বিতীয় সমস্যা উন্নয়নশীল ও দারিদ্র্য পীড়িত দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্র সমূহে। পশ্চিমারা তাদের নিজ দেশ সুরক্ষিত করে আর একের পর এক উন্নয়নশীল, দারিদ্র্য পীড়িত, এশিয়ার রাষ্ট্র সমূহে যুদ্ধ লাগিয়ে অনিরাপদ করে। ফলে এশিয়ার ধনীরা নিরাপদ জীবনের খোঁজে পশ্চিমা বিশ্বে অবৈধ মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার করে। ফলে এশিয়ার দারিদ্র্য রাষ্ট্র সমূহ আরও দরিদ্র হচ্ছে।

জাতিসংঘে ভাষণে বর্তমান বিশ্বের তৃতীয় সমস্যা হিসেবে ইমরান খান উল্লেখ করেন, পশ্চিমা বিশ্বের ইসলাম বিদ্বেষ বা ইসলাম ফোবিয়া। ইমরান খান বলেন, বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের সংখ্যা ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন। পৃথিবীর সবক’টি মহাদেশেই মুসলমানদের বসবাস। নাইন ইলেভেনের পর থেকে আশঙ্কাজনকভাবে ইসলামফোবিয়ার ক্রমবৃদ্ধি। এই বৃদ্ধিটা উদ্বেগজনকও বটে। শুধু উদ্বেগজনকই নয়, এটাই মূলত বিভাজন সৃষ্টি করেছে। আমার বক্তব্য হলো, আমাদেরকে অবশ্যই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। নাইন ইলেভেনের পর র‌্যাডিক্যাল ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়। মুসলিম নেতারা পশ্চিমা নেতাদের বার বার বুঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, র‌্যাডিক্যাল ইসলাম বলে আদৌ কিছু নেই।
আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন একজন আদর্শ মানব, মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের বাস্তব নমুনা। আমরা কেবল তাঁর আদর্শে বেঁচে থাকতে চাই। রাসুল মদিনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যাকে বলে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র।
আমি ইসলাম সম্পর্কে এমন অদ্ভুত বিষয় শুনেছি, যা ইসলাম সম্পর্কে নির্ঘাত মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না। ইসলাম নাকি নারীবিরোধী, সংখ্যালঘুবিরোধী। অথচ, মদিনা রাষ্ট্রই সর্বপ্রথম নারী, অসহায় ও বিধবার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। মদিনা রাষ্ট্র ঘোষণা করেছিল, কালো-ধলো সকল মানুষ একসমান।

ইমরান খান উদাহরণ টেনে বলেছেন, আজকের পশ্চিমার ইসলাম ফোবিয়া বা ইসলাম ভীতি এটা সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমাদেরই আবিষ্কার। আফগানিস্তানে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন বিরোধী যুদ্ধ হয় তখন তালেবানদের বানানো হলো মুক্তিযোদ্ধা। আর যখন আমেরিকা নিজেই আফগানিস্তান দখলে যুদ্ধ করলো তখন তালেবান হলো সন্ত্রাসী। অথচ আমেরিকা এখন নাকে খত দিয়ে তালেবানের সাথে সমঝোতার প্রক্রিয়া রয়েছে।

সবশেষে ও চতুর্থ ইস্যু হিসেবে ইমরান খান কাশ্মীর সমস্যা তুলে ধরেন। ইমরান খান কাশ্মীর নিয়ে বলেন, কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া ভারতের সংবিধানের ৩৭০ নং আর্টিকেল তারা বাতিল করল। কাশ্মীরে প্রচুর সেনা সমাবেশ করল। এখন কাশ্মীরে মোট সেনার পরিমাণ ৯ লাখের বেশি। এর মাধ্যমে ৮ মিলিয়ন লোকের উপর কারফিউ জারি করা হল।
একজন লোক কিভাবে এটা করতে পারে? কারণ নরেন্দ্র মোদী আরএসএসের আজীবন সদস্য। যার কারণে মোদী আমেরিকাতেও প্রবেশ করতে পারেনি দীর্ঘদিন। আরএসএস এমন একটি সংগঠন যেটি এডলফ হিটলার এবং মুসোলিনীর হিংস্র আদর্শে অনুপ্রাণিত। নাৎসীরা যে পদ্ধতিতে অন্য সকল জাতি হতে নিজেদের সেরা ভাবতো একইভাবে আরএসএসও নিজেদের সবার চেয়ে সেরা মনে করে। আরএসএস ভারত থেকে মুসলমানদের জাতিগত নিধনে বিশ্বাসী।
এটা সবাই জানে, আরএসএস হিন্দুত্ববাদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী। তারা মুসলিম ও খৃস্টানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায়। তারা বিশ্বাস করে মুসলিম শাসনের ফলে হিন্দুত্ববাদের সোনালী যুগের অবসান ঘটেছে। তারা সরাসরি মুসলিম ও খৃস্টানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায়। এটা সবাই জানে। গুগল চার্জ করে যেকেউ জানতে পারবেন আরএসএস এর প্রতিষ্ঠাতা গোলকওয়ার। এই ঘৃণার আদর্শ ১৯৪৮ সালে হত্যা করেছে ভারতের অবিসংবাদিত নেতা মহাত্মা গান্ধীকে। এই ঘৃণার আদর্শ আরএসএস এর গুন্ডাদেরকে মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে ২০০০ মুসলিমকে জবাই করতে প্রেরণা দিয়েছিল। মোদির নির্দেশে গেরুয়া পাঞ্জাবী পরে ৩ দিন ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল আরএসএস সন্ত্রাসীরা। তাদের তান্ডবে ২০০০ মুসলিম নিহত হয় এবং গৃহহীন হয় ১৫০,০০০ মুসলিম। কাশ্মীরে ৮ মিলিয়ন লোককে বন্দী করে রাখা হয়েছে! এটা কেমন মানসিকতা! সেখানে নারী শিশু অসুস্থ মানুষ রয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব কী ভাবছে? ৮ মিলিয়ন পশু বন্দী? তারা মানব সন্তান।
গত ৩০ বছরে কাশ্মীরে ১ লাখ নাগরিক নিহত হয়েছে, ১১ হাজার নারী ধর্ষিতা হয়েছে। এটা জাতিসংঘের রিপোর্ট। কিন্তু বিশ্ববাসী কিছু করছে না। কারণ তারা দেখছে ভারত তাদের জন্য ১.২ বিলিয়ন জনসংখ্যার বিশাল বাজার। বস্তুগত স্বার্থের কাছে বলি হচ্ছে মানবতা।
৭৪ তম জাতিসংঘ সম্মেলনে তুরষ্ক প্রসিডেন্ট রিসিপ তাইয়েপ এরদোয়ান, মালোশিয়া প্রধানমন্ত্রী ডা.মাহাথির মোহাম্মদ ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহ স্থান পেয়েছে তা বিশ্বে নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি করবে। আগামী দিনে জাতিসংঘের সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী মুসলিম বিশ্বের নেতারা সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে হুংকার দিয়ে সাম্রাজ্যবাদ রুখতে দু’টি ফর্মূল প্রদান করতে পারেন। তা হলো: এক, জাতিসংঘের সংস্কার। দুই হচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্যের বিনিময় মাধ্যম ডলার বর্জন করে স্বর্ণের ক্যারেট অথবা নিজস্ব দেশের মূদ্রার ব্যবহার করা।

পরিশেষে, এবারের জাতিসংঘ সম্মেলন ছিল বিশ্ব মানবতার ঐতিহাসিক দলিল এবং তিন বিশ্ব নেতার বক্তব্য ছিল নতুন পৃথিবীর ইশতেহার।

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক