ছোট ছেলের জীবনের নিরাপত্তা চান আবরারের মা

ছাত্রলীগের নির্যাতনে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের নিজ জেলা কুষ্টিয়া এখন এক আতঙ্কের নগরী। বিশেষ করে আবারারের মৃত্যুর পর তার পরিবার, রায়ডাঙ্গাবাসী ও তার নিজ স্কুল কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভীতিকর এক অবস্থার মাঝে দিনযাপন করছে।

আবরারের মা রোকেয়া বেগম বলেন, এক ছেলেকে হারিয়েছি, আরেক ছেলেকে হারাতে চাই না। আমি কিছুই বলতে চাই না। আবরারের মায়ের এ বক্তব্যই প্রমাণ করে কতটা হুমকির মাঝে রয়েছে পরিবারটি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে আবরারের মা রোকেয়া বেগম বলেন, আমরা ছেলের জন্য সব ছেলেরা রাজপথে নেমেছে। আমি চাই না আমার মতো আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক। আমার এক ছেলে নেই, এখন সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছেলেরা আমার ছেলে। তাদের ওপর যেন অত্যাচার না হয়।

তিনি বলেন, যে ভিসি আমার ছেলেকে নিরাপত্তা দিতে পারল না সে ভিসি কিভাবে হাজার হাজার ছেলে-মেয়েকে নিরাপত্তা দেবে? আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি। আমি এক ছেলেকে হারিয়েছি, আরেক ছেলেকে হারাতে চাই না। আমি আমার ছোট ছেলে আবরার ফায়াজের নিরাপত্তা চাই।

তিনি বলেন, আমার ছেলেকে যারা মেরেছে তাদের কঠোর শাস্তি চাই। তাদের বুয়েট থেকে বহিষ্কার চাই। আমার বড় ছেলেকে সবচেয়ে বড় ডিগ্রি নিতে সেখানে পাঠিয়েছিলাম। সেই স্বপ্ন আমার পূরণ হলো না। আমার সেই স্বপ্ন যেন ছোট ছেলেকে দিয়ে পূরণ করতে পারি সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। আমি আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই।

এদিকে, দ্রুত বিচার আইনে মামলার বিচারকাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। তিনি বলেন, প্রিয় সন্তানকে যারা বাঁচতে দেয়নি তাদেরও কঠিন পরিণতি দেখে কবরে যেতে চাই।

বৃহস্পতিবার বিকেলে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামের বাড়িতে সাংবাদিকদের বরকত উল্লাহ বলেন, দ্রুত চার্জশিটের পাশাপাশি দেশব্যাপী চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি দ্রুত বিচার আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।

তিনি বলেন, মামলার আসামি বাদেও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তদন্ত করে বের করে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আবরার হত্যার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেবেন, আমি তার কথার বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি হোক। ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। সেই সঙ্গে এমন মেধাবী ছাত্ররা যেন অকালে ঝরে না পড়ে।

গত রোববার (০৬ অক্টোবর) রাতে বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এরপর তাকে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে চক বাজার থানায় মামলা করেন তার বাবা বরকত উল্লাহ। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এর মধ্যে ১৩ জনের নাম মামলার এজাহারে রয়েছে।