ছাত্রলীগের কমিটিতে বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার নির্দেশ শেখ হাসিনার

ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া বিতর্কিত নেতাদের বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ছাত্র সংগঠনটির অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে বুধবার (১৫ মে) দুপুরে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে ডেকে এ নির্দেশ দেন।

এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, উপদফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। গণভবন সূত্রে জানা গেছে, শোভন-রাব্বানীর সঙ্গে কথা বলার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে একান্তে আলাপ করেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ তালিকায় থাকা ১২/১৫ জন বিতর্কিত নেতার নাম কালি দিয়ে চিহ্নিত করে তাদের বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন। তালিকায় যদি আরও কোনো বিতর্কিত নেতা থাকেন খোঁজ-খবর নিয়ে তাদেরকেও বাদ দিতে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

গণভবনে উপস্থিত সূত্র জানায়, সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিতর্কিতদের ব্যাপারে উত্থাপিত অভিযোগগুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করার নির্দেশ দিয়েছেন। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার গেলে তাদেরকেও অব্যাহতি দেওয়ার নির্দেশ দেন সংগঠনের অভিভাবক শেখ হাসিনা। বিশেষ করে যাদের নামে খুনের মামলা, বিবাহ, মাদক ব্যবসার সংশ্লিষ্টতা, জামায়াত-বিএনপি পরিবার তথা মানবতাবিরোধী পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে তাদেরকেও চিহ্নিত করে অব্যাহতি দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

এছাড়াও যারা কমিটি ঘোষণার পর থেকে ক্ষোভ প্রকাশের নামে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে তাদের ব্যাপারেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

গত সোমবার (১৩ মে) ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এ কমিটিকে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে তা ভেঙে নতুন কমিটি দেওয়ার দাবি জানিয়েও মঙ্গলবার (১৪ মে) ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন পদবঞ্চিতরা।

ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া প্রায় অনেক নেতার বিরুদ্ধেই বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেকের বিরুদ্ধে বিয়ে, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, অনুপ্রবেশকারী, বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক পরিবারের মতাদর্শে সদস্য, মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে কমিটি ভেঙে পুনর্গঠনের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন পদবঞ্চিতরা। তা না হলে একযোগে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে এ হুমকি দেওয়া হয়। সেখানে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিগত কমিটির প্রচার সম্পাদক সাইফ উদ্দিন বাবু বলেন, বিগত দিনগুলোয় যারা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের একটি বৃহৎ অংশকে বাদ কিংবা সঠিক মূল্যায়ন না করে ছাত্রলীগে নিষ্ক্রিয়, চাকরিজীবী, বিবাহিত, অছাত্র, গঠনতন্ত্রের অধিক বয়সী, বিভিন্ন মামলার আসামি, মাদকসেবী, মাদকব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে আজীবন বহিষ্কৃতসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পদায়ন করা হয়েছে। এমন ব্যক্তিদের পদায়ন ছাত্রলীগের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে আমাদের ব্যথিত করেছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ কমিটি ভেঙে দিয়ে আরও খোঁজ-খবর নিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি।

এছাড়াও মধুর ক্যান্টিনে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর নিদের্শেই হামলা হয়েছে বলে পদবঞ্চিতরা অভিযোগ করেন।