জরিপ মৃধা গরু কিনতে এসেছিলেন রাজশাহী সিটি হাটে। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বাবা ও চাচা। গরু পছন্দ হয়নি। আড়াই লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তখন সন্ধ্যা। সড়কে কোনো গাড়িঘোড়া নেই। তাঁরা একটি ট্রাকে ওঠেন। চলন্ত ট্রাকের ভেতরেই বাবা ও চাচাকে বেঁধে ছেলে জরিপ মৃধাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ছেলের লাশের সঙ্গে বাবা ও চাচাকে ট্রাক থেকে ফেলে দেওয়া হয়। বুধবার দিবাগত রাতে রাজশাহীর পবা উপজেলার কুখণ্ডি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর স্বজন ও পুলিশ।
নিহত জরিপ মৃধার বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার মহিষমারি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আলাল মৃধা ও চাচার নাম রাশিদুল ইসলাম। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে আলাল মৃধা বাদী হয়ে নগরের কাটাখালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান বলেন, তাঁরা গত বুধবার রাজশাহী সিটি হাটে গরু কিনতে এসেছিলেন। গরুর হাটে ঘুরতে ঘুরতে তাঁদের দিন কেটে যায়। গরু পছন্দ হয়নি। তাঁরা যখন বাড়ি ফেরা শুরু করেন, তখন সন্ধ্যা। তাঁরা গরু হাট থেকে নগরের আমচত্বর এলাকায় আসেন। সেখানেও কোনো গাড়ি খুঁজে পাননি। কিছু দূর হেঁটে তারা নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল এলাকায় আসেন। সেখানে তাঁরা একটি খালি ট্রাক পান। ট্রাকচালক তাঁদের কথা শুনে বলেন, তিনি নাটোরের দিকেই যাচ্ছেন। জরিপ মৃধা তাঁর বাবা ও চাচাকে সঙ্গে করে ট্রাকে উঠে বসেন। কিছুক্ষণ পর ট্রাকচালক আর তিনজন লোককে তুলে নেন। এই তিনজন ট্রাকে উঠেই জরিপের বাবা ও চাচাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া চেষ্টা করে। এতে বাধা দিলে একপর্যায়ে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে জরিপের মাথায় আঘাত করা হয়। এতে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর দুর্বৃত্তরা তাঁর কাছে থাকা প্রায় আড়াই লাখ টাকা নিয়ে নেয়। টাকা নেওয়ার পর তাঁদের নিয়ে আশপাশের কয়েকটি এলাকা ঘুরে তাঁদের কুখণ্ডি বাইপাস এলাকায় তিনজনকে ট্রাক থেকে ফেলে দেওয়া হয়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ওই সময় কাটাখালী থানার একটি টহল দল ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। তারা ওই তিনজনকে পড়ে থাকতে দেখে কাছে যায় এবং সব ঘটনা জানতে পারে। পরে জরিপের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। জরিপের বাবা ও চাচাকে পুলিশ হেফাজতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করা হয়। জরিপের বাবা বাদী হয়ে নগরের কাটাখালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
এডিসি গোলাম রুহুল কুদ্দুস আরও বলেন, যারা খুন ও ছিনতাই করেছে, তারা সংঘবদ্ধ একটি চক্র। গভীর রাতে ট্রাক নিয়ে তারা ঘুরে বেড়ায়। তারা যাত্রী পরিবহনের নামে লোক উঠিয়ে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে মারধর করে এবং টাকা ছিনতাই করে নামিয়ে দেয়। ঘটনার পর থেকে ট্রাকটি খুঁজছে পুলিশ। এ ব্যাপারে বিভিন্ন থানায় বেতারবার্তা পাঠানো হয়েছে।