ডা. সাঈদ এনাম: বাংলাদেশে রেনিটিডিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে গ্যাস্ট্রিকের বড়ি হিসেবে রেনিটিডিনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটি ও.টি.সি (ওভার দা কাউন্টার) ড্রাগ হিসেবে বিবেচিত। ওটিসি হল যে ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ, প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ফার্মেসি থেকে কেনা যায়।
বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান কোম্পানি মেসার্স সারাকা ল্যাবরেটরিজ লি. ও ডা. রেড্ডি কোম্পানির তৈরি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ রেনিটিডিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এ সব কোম্পানি তাদের উৎপাদিত রেনিটিডিন ট্যাবলেট তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ক্যান্সার উৎপাদনকারী ক্ষতিকারক NDMA (এন-নাইট্রোসো-ডাই-মিথাইল এ্যমিন) ব্যবহার করে।
এন নাইট্রোসো-ডাইমিথাইল-এমিন পাকস্থলীর এসিডিটি নিঃসরণ কমালেও এটি মানবদেহের DNA (ডি.এন.এ)’র গঠনে ক্ষতিকারক পরিবর্তন সাধন করে ফলে দেহে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এমনকি এটি লিভার ফেইলুর করে।
কি এই নাইট্রোসো – ডাই- মিথাইল-এমিন?
গবেষণাগারে ক্যান্সার নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এই নাইট্রোসো – ডাই- মিথাইল-এমিন ব্যবহার করা হয়। এটিকে ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করানো হয় দেহের কোষের ক্যান্সার সৃষ্টিতে। বিষপ্রয়োগে কাউকে হত্যা করতে, পানি বা খাবারের সঙ্গে এই NDMA দ্রব্যটি মেশানোর ইতিহাস রয়েছে।
২০১৩ সালে চীনের ফুডান ইউনিভার্সিটি-সাংহাই -এর ছাত্র ‘হুয়াং ইয়াং’ কে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগে তার সহপাঠী ‘লিং’ কে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। লিং-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে সে তার রুমমেট হুয়াংকে ইচ্ছা করেই পানির সঙ্গে এই নাইট্রোসো-ডাই-মিথাইল-এমিন বিষ মিশিয়ে হত্যার করে। যদিও বিচারকের কাছে ‘লিং’ আর্জি জানায়, সে ‘এপ্রিল-ফুল’ তামাশা হিসেবে পানির সঙ্গে NDMA বিষ মেশায়।
যেসব কাজে ওই বিষাক্ত দ্রব্যটি ব্যবহার করা হয়
এন-নাইট্রোসো-ডাই-মিথাইল-এ্যমিন মূলত শিল্পকারখানায় জ্বালানি, রং, প্লাস্টিক দ্রব্য তৈরি ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। এমনকি রকেটের জ্বালানি হিসেবেও এর সফল ব্যবহার হয়ে আসছে।
ভারতের এসব কোম্পানি যেহেতু এই ক্ষতিকারক দ্রব্য NDMA নাইট্রোসো – ডাই- মিথাইল-এমিন দিয়ে গ্যাস্ট্রিকের রেনিটিডিন ওষুধ তৈরি করে তাই জনস্বার্থে এ কাঁচামালে উৎপাদিত রেনিটিডিন ওষুধের বাজারজাত, বিক্রয়, ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। ধন্যবাদ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে।
সবার প্রতি পরামর্শ- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনও কোনো ওষুধ সেবন করবেন না।
লেখক: ডা. সাঈদ এনাম
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, দক্ষিণ সুরমা, সিলেট।