আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আঘাত সামলাতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন নারী নেতৃত্বে পরিচালিত কয়েকটি দেশ করোনার সংক্রমণ রোধে বেশ সফলতা দেখিয়েছে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত করোনা মোকাবেলায় পুরুষ নেতৃত্বের থেকে এগিয়ে রয়েছে নারী নেতৃত্ব। এ ক্ষেত্রে তারা চমৎকার মেধার পরিচয় দিচ্ছেন।
জার্মান, নিউজিল্যান্ড ও ডেনমার্ক থেকে তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন নারীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তার দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সফলতা দেখিয়েছে। ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের নেতারাও করোনা প্রতিরোধে ভালো করেছেন, তবে নারী নেতাদের থেকে তুলনামূলক কম।
এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অন্যতম। প্রায় ১৬ কোটি ১০ লাখ মানুষকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনিও অনেক বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার গৃহীত পদক্ষেপকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ‘প্রশংসনীয়’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই জার্মানির ৭০ শতাংশ নাগরিক এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন বলে তিনি সবাইকে সতর্ক করেছিলেন।
করোনার কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের থেকেও খারাপ পরিস্থিতি ধারণ করতে পারে বলে জানিয়েছিলেন অ্যাঙ্গেলা।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে জার্মানিতে ৫ হাজার লোক মারা যায়, মেরকেলের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে যা অন্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় অনেক কম।
করোনাভাইরাসে জার্মানিতে যত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের অর্ধেকই সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে। স্পেনে সুস্থ হওয়ার হার ৩৭ শতাংশ, ইতালিতে ২২ শতাংশ, ফ্রান্সে ২১ শতাংশ। যুক্তরাজ্যে এই হার ০.৩ শতাংশ।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক প্রতিবেদনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকব এবং হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তার প্রশংসা করা হয়েছে। তারা এই সংকটে অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন।
ইথিওপিয়ার প্রেসিডেন্ট সাহলি-ওয়ার্ক জেউডি প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকব এবং অন্য জাতীয় নেতাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তারা একটি গ্রুপ গঠন করেছেন। তাতে রয়েছেন তিনজন পুরুষ ও দুজন নারী। এর পর তারা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে যৌথভাবে একটি আবেদন জানিয়েছেন বৈশ্বিক সহযোগিতার।
তারা লিখেছেন– আমরা করোনাভাইরাসকে আরও কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও মোকাবেলা করতে পারি। এ ক্ষেত্রে সব বাধাকে সরিয়ে ফেলতে হবে জ্ঞান আদান-প্রদান ও সহযোগিতার বেলায়। এমন সংকটে সবচেয়ে উত্তম এবং সবচেয়ে অধম- উভয় প্রকারের মানুষেরই প্রকাশ ঘটায়।
ওই প্রতিবেদনে নেপাল, নামিবিয়া, বলিভিয়া, জর্জিয়ার নারী নেত্রীদের সফলতার কথাও তুলে ধরা হয়।
এ ছাড়া ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডারিকসেন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেন।
ডেনমার্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজারের কম এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৭০ জন। করোনা মোকাবেলায় ফ্রেডারিকসেনের পরিষ্কার নির্দেশনামূলক বক্তব্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট তাসি ইং ওয়েন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেন। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়েও মহামারী থেকে দেশটি রক্ষা পায়।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধ এবং এর বিস্তার ঠেকাতে শুরুতেই কঠোর পদক্ষেপ নেন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সান্না মারিন।
তার সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় ফিনল্যান্ডে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ও মৃতের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।