‘এরশাদের শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত আছে’

রোববার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ‘মৃত্যুর গুজব’ ছড়িয়ে পড়ে। মন্ত্রী, এমপি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে এবং অখ্যাত অনলাইন পোর্টালে তাঁর মৃত্যুর সংবাদও প্রকাশ করেছে।

তবে এরশাদের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী মধ্যরাতে জানান, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত আছে। তিনি এখনো অক্সিজেন সাপোর্টে আছেন। তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেয়ার দরকার হয়নি।’

রোববার বিকেলে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এরশাদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ছোট ভাই জিএম কাদের বলেন, তার ফুসফুসে পানি চলে এসেছে, ইনফেকশন দেখা দেওয়ায় শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে। তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।

জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ফুসফুসে পানি জমার কারণে সকাল থেকেই তার (এরশাদ) কিছুটা শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল।

তিনি বলেন, সিএমএইচের চিকিৎসকরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে পল্লীবন্ধুর চিকিৎসা দিচ্ছেন। তারা মনে করেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চিকিৎসা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালেই সম্ভব। তবে, চিকিৎসকরা পরামর্শ দিলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পৃথিবীর যেকোনো দেশেই পাঠানোর প্রস্তুতি আছে আমাদের।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সবসময় সিএমএইচের চিকিৎসায় আস্থা রেখেছেন। আমরাও এখানকার চিকিৎসায় সন্তুষ্ট।

২৬ জুন এরশাদের শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি ঘটলে তাঁকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানে তার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কিছু সংক্রমণের চিকিৎসা চলছে। তার ওষুধ পরিবর্তন করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতির ফুসফুসে পানি জমেছে, যা বের করা জরুরি। তবে তার ফুসফুসের পানি বের করলে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটতে পারে।

এরপরও চিকিৎসকরা তার ফুসফুস থেকে পানি অপসারণ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্যরা।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সিএমএইচ-এর ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বাইরে থেকে তার সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। এ কারণে আত্মীয়-স্বজনরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে গত বছরের ২০ নভেম্বর ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সামনে সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক বক্তব্য রাখেন এরশাদ। এরপর অসুস্থতার কারণে আর কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেননি তিনি। ৬ ডিসেম্বর গাড়িতে করে অফিসের সামনে এলেও সেখানে বসে কথা বলেই চলে যান।

১০ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান এরশাদ। ভোটের মাত্র ৩ দিন আগে ২৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরলেও নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে যোগ দেননি। এমনকি নিজের ভোটও দিতে যেতে পারেননি সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। ভোটের পর শপথ নেন আলাদা সময়ে গিয়ে। সেদিনও স্পিকারের কক্ষে হাজির হয়েছিলেন হুইল চেয়ারে বসে।

২০ জানুয়ারি ফের সিঙ্গাপুরে যান চিকিৎসার জন্য। সেখান থেকে ফেরেন ৪ ফেব্রুয়ারি। তবে এখনো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে দেখা যায়নি। সংসদ অধিবেশনে মাত্র একদিনের জন্য হাজির হয়েছিলেন তাও হুইল চেয়ারে ভর করেই।