পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলেই আমরা শিক্ষার্থীদের আনন্দের উদযাপন দেখি। পরদিন সংবাদপত্রের পাতাজুড়ে থাকে তাদের উচ্ছ্বাসের ছবি। তাদের উদযাপন আমাদেরও আন্দোলিত করে। তা দেখে অনেকে হয়তো অতীতে ফিরে যাবেন। এসএসসি, এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় পাসের পর নিজেদের ভালো লাগার স্মৃতি রোমন্থন করবেন। এখন অবশ্য পাবলিক পরীক্ষা চারটি; নতুন করে যোগ হয়েছে প্রাথমিক সমাপনী বা পিইসি ও অষ্টম শ্রেণির পর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা। তবে আমাদের সামনে হাসিমাখা মুখের ছবিই কেবল আসে অর্থাৎ যারা কৃতকার্য হয়েছে কিংবা কাঙ্ক্ষিত ফল পেয়েছে। এর বাইরেও যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ রয়েছে তা স্মরণযোগ্য, যারা সব বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। বুধবার প্রকাশিত ২০১৯ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলেও আমরা সেটা দেখেছি। গত বছরের তুলনায় সব সূচকেই এবারের ফল এগিয়ে আছে। এবার আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে দশটি বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবারের সমকাল শিরোনাম করেছে- ‘সাফল্যে ফিরল সুদিন’। এটি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে সব বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৩.৯৩ শতাংশ, ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় পাস করতে পারেনি। অকৃতকার্যদের মলিনমুখ সংবাদমাধ্যমে না এলেও তাদের বেদনা অনুধাবন করা কঠিন নয়। আমরা জানি, একজন শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় ১২ বছর কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করার পর এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়। এরপরও এ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার বিষয় আমাদের ভাবা উচিত। এটা ঠিক, নানা কারণে হয়তো একেবারে শতভাগ পাস করা কঠিন। তবে শিক্ষার্থীদের যথাযথ পরিচর্যা করলে, একই সঙ্গে শিক্ষার্থী নিজে পাঠে বিশেষ মনোযোগী হলে পাসের হার শতভাগের কাছাকাছি পৌঁছা অসম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর গুণগত মান সর্বাগ্রে বিবেচনায় নিতে হবে। বিষয়টি সর্বোচ্চ ফল বা জিপিএর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এবার মাদ্রাসা-কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৭ হাজার ৫৮৬ জন। পাসের হারের দিকটি বিবেচনায় ভালো বলা গেলেও মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায়ই এর প্রমাণ মেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, সেখানে গড়ে ১০-১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী মাত্র পাস করে। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ইংরেজি বিষয়ে মাত্র দু’জন শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে, পরে শর্ত শিথিল করে শিক্ষার্থী নেওয়া হয়। অর্থাৎ জিপিএ ৫ পেলেও শিক্ষার্থীদের গুণগত মানে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। সুতরাং মান বাড়াতে নজর দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা যা শেখে তা যেন যথাযথ হয় এবং বাস্তব জীবনে তা কাজে লাগাতে পারে।
পাস-ফেলের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় প্রভাবক ভূমিকা পালন করে, তার অন্যতম ইংরেজি। এবার অবশ্য এইচএসসি পরীক্ষায় ইংরেজিতে শিক্ষার্থীরা ভালো করেছে। গোটা ফলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ বছর শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৪টি কমেছে। কিন্তু এটা বিস্ময়কর, ৪১টি প্রতিষ্ঠানে একজনও পাস করেনি! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের আরও তদারকি প্রয়োজন। এইচএসসি শিক্ষার্থীর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এ পর্যায়ে এসে শিক্ষার্থীরা যেন উচ্চশিক্ষার জন্য নিজেদের যোগ্য করে তুলতে পারে কিংবা কেউ উচ্চশিক্ষার সুযোগ না পেলেও যেন বাস্তব জীবন পরিচালনাসহ নিজেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া চাই। শিক্ষার গুণগত মান ধরে রেখে পরীক্ষার ফলে উত্তরোত্তর সাফল্যই প্রজন্মকে এগিয়ে নেবে। উত্তীর্ণদের অভিনন্দন।