চলতি বছর এশিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) চাহিদা কিছুটা কমে আসতে পারে। এরই মধ্যে স্পট এলএনজির উচ্চমূল্যের পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপকে শীতল জ্বালানিতে স্থানান্তর হতে বাধ্য করায় এমনটা দেখা যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষক ও শিল্প সূত্ররা। স্পট মূল্যের উচ্চহার এরই মধ্যে এশিয়ায় জ্বালানি পণ্যটির বাণিজ্যকে মন্থর করে দেয়ার পাশাপাশি চাহিদাও কমিয়ে এনেছে। এমনকি কোনো কোনো দেশে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় সরবরাহও কমে এসেছে। খবর রয়টার্স।
চলতি বছরের শেষ নাগাদ এশিয়ান নতুন দুই এলএনজি ক্রেতা ফিলিপাইনস ও ভিয়েতনাম বাজারে প্রবেশ করার সময়ই জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা কমে আসার এমন সম্ভাবনা দেখা গেল। ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয় সংস্থা পিভি গ্যাস জানায়, ক্রেতাদের জন্য এলএনজির বাজার বেশ প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। যেখানে ২০২১-২৫ সালের মধ্যে সরবরাহ আরো সংকুচিত হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে কিন্তু মহামারী-উত্তর পণ্যটির চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে ভিয়েতনামে প্রথম এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে পিভি গ্যাস। সংস্থাটি আরো জানায়, এমন পরিস্থিতি সামনের বছরগুলোতে এলএনজির দামকে আরো বাড়িয়ে তুলবে। একই সঙ্গে স্বল্প সময়ে তা কমে আসারও কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটসের এলএনজি স্পট মূল্যবিষয়ক বাজার আদর্শ প্ল্যাটস জেকেএম অনুসারে সোমবার প্রতি ১০ লাখ ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট এলএনজির দাম রেকর্ড বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ ডলার ৭৬ সেন্ট। রাশিয়ার গ্যাস ও এলএনজির পরিবর্তে ইউরোপের ক্রেতারা বৈশ্বিক বাজারে পণ্যটির জন্য অন্যান্য উেসর দিকে ঝুঁকে পড়ায় এমনটা দেখা গিয়েছে।
আর্থিক খাতের পেশাদারদের জন্য দাম, তথ্য ও খবর সরবরাহ-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান রিফাইনিটিভ ইকনের তথ্য অনুসারে প্রতি ১০ লাখ ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট এলএনজির দাম ৫১ ডলারের কাছাকাছি। গত বছরের মার্চে ১০ লাখ ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিটের দাম ছিল ৬ ডলার। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জির মতে, বছরভিত্তিক অনুপাতে ২০২২ সালে এশিয়ান এলএনজির চাহিদা ২ শতাংশ বাড়তে পারে। ২০২১ সালে চাহিদা বাড়ার হার ছিল ৮ শতাংশ।
উড ম্যাকেঞ্জির ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যালোরি চাও বলেন, চলতি বছর ইউরোপে এলএনজির চাহিদা অন্তত ২০ শতাংশ বাড়বে। রাশিয়ার পাইপলাইনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা ও নিজেদের গ্যাস মজুদ পুনরায় পূর্ণ করার কারণে এমনটা দেখা যাবে।
সম্প্রতি রাশিয়ান গ্যাসের ওপর থেকে চলতি বছরের মধ্যেই নির্ভরশীলতা দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর পরই অঞ্চলটিতে যেকোনো সময়ের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম। একই সঙ্গে ২০৩০ সালের আগেই জ্বালানি তেলের জন্য রাশিয়ার ওপর থেকে নির্ভরতা বন্ধ করছে চাইছে অঞ্চলটি। বর্তমানে মোট গ্যাস সরবরাহের ৪৫ শতাংশের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভর করে থাকে ইউরোপ। এ অবস্থার পরিবর্তন হলে ক্রমেই গ্যাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকবে অঞ্চলটি।
ফ্যাক্টস গ্লোবাল এনার্জি গ্রুপের এলএনজি বিশ্লেষক এডমন্ড সিয়াউ বলেন, ইউরোপ থেকে এলএনজি কার্গো এশিয়ার দিকে স্থানান্তর করতে অঞ্চলটির ক্রেতাদের একটি ভালো পরিমাণ প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে। ফলে এশিয়ান স্পট এলএনজির দাম অনেকটা ইউরোপে গ্যাসের দামের ওপর নির্ভর করবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এলএনজির জন্য এশিয়ান ক্রেতাদের চাহিদা ইউরোপকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে এশিয়ায় এলএনজির স্পট মূল্য ইউরোপের তুলনায় তেমন উচ্চহারে বাড়বে না। একই সঙ্গে উচ্চ স্পট মূল্যের কারণে ভারতে এলএনজির চাহিদা কমে আসবে, একই সঙ্গে দেশটির অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধিও এতে ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি আমদানিকারক চীনের চাহিদা আগের মতোই ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। মূলত কয়লা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে অন্যান্য জ্বালানি উেসর দিকে ঝুঁকতে দেশটির নীতির কারণে এমনটা হবে। চলতি বছরে চীনের এলএনজির চাহিদা ৮৫ লাখ টন পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।