আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির আকার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সেইসঙ্গে কমিটিতে কমপক্ষে দুটি সম্পাদকীয় পদসহ উপসম্পাদকের নতুন পদ সৃষ্টির চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে।
আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত গঠনতন্ত্র উপকমিটির প্রথম বৈঠকে এ প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অঙ্গ সংগঠনের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ৮১। এই সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। নির্বাচন ও প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদকের পাশাপাশি কয়েকটি সম্পাদকীয় পদের সঙ্গে উপসম্পাদকের নতুন পদ সৃষ্টির চিন্তাও রয়েছে। এ নিয়ে গতকালের বৈঠকে আলোচনা হলেও এ প্রস্তাব লিখিতভাবে গঠনতন্ত্র উপকমিটির আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের তালিকায় রয়েছে মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, তাঁতী লীগ ও যুব মহিলা লীগ। এই সাত সংগঠনের সঙ্গে এবার মৎস্যজীবী লীগের নাম যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আগামী ২৯ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মৎস্যজীবী লীগের প্রথম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করার কথা।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিজেদের সংগঠনের গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। একইভাবে মহিলা শ্রমিক লীগও তাদের গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে পরিচালনার কথা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে নতুন করে সংযোজনের প্রস্তাব আসবে। সেইসঙ্গে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নাম সংশোধন করে গঠনতন্ত্রে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ লেখার প্রস্তাব থাকবে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা সমকালকে জানিয়েছেন, গঠনতন্ত্র উপকমিটির প্রস্তাব নিয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তার মতামত নেওয়ার পর ওই প্রস্তাব কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে অনুমোদন এবং পরে জাতীয় সম্মেলনে চূড়ান্ত করা হবে। তবে গঠনতন্ত্রে বড় ধরনের মৌলিক কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলেই শীর্ষ নেতারা মনে করছেন।
অবশ্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রে সংযোজনের উদ্যোগ রয়েছে বলে ওই নেতারা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে গঠনতন্ত্রের কয়েকটি ধারা ও উপধারায় কিছু সংযোজন এবং সংশোধনের প্রস্তাব থাকবে। সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ভাষা আরও প্রাঞ্জল করার উদ্যোগও রয়েছে বলে জানা গেছে।
তৃণমূলে চিঠি :আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের সংশোধনী প্রস্তাব ও মতামত চেয়ে তৃণমূল নেতাদের কাছে গত ৩০ অক্টোবর চিঠি পাঠিয়েছেন গঠনতন্ত্র উপকমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রস্তাব পাঠানোর তাগিদ দিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, সংগঠনের গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন ধারা সংযোজন, পরিমার্জন ও সংশোধনী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত গ্রহণ এবং তাদের পাঠানো প্রস্তাব পর্যালোচনা করে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের প্রয়োজনীয় সংশোধনী প্রস্তাবনা আকারে জাতীয় সম্মেলনে অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেনের পরিচালনায় গঠনতন্ত্র উপকমিটির গতকালের বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, ড. মসিউর রহমান, আবদুর রহমান, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সুজিত রায় নন্দী, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আমিনুল ইসলাম আমিন, আখতারউজ্জামান, অ্যাডভোকেট এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাওছার, অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন এবং ড. সেলিম মাহমুদ। সূত্র: সমকাল।