আসিফ আকবর। অনেকে তাকে বাংলা গানের যুবরাজ বলে আখ্যায়িত করেন। সেই ২০০০ সাল থেকে শুরু। অবিরাম পথ চলছেন। অবশ্য মাঝে বছর দুয়েক বিরতি ছিল। কিন্তু সেই বিরতিতে নতুন গান না করলেও গানের ভুবনেই বিচরণ ছিল। নিজেকে ভাঙছেন, গড়ছেন। বয়সের কোঠা পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছেন তারুণ্যের গতিতে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হালের ভিডিও নামক দৃষ্টি নান্দনিকতার পরীক্ষাও দিচ্ছেন হর-হামেশা। সেজেছেন সাধারণ সফল কিংবা ব্যর্থ প্রেমিক থেকে দেবদাস। কখনও ডাকাত সেজে পথচলা কিংবা পুলিশের বেশে অপরাধীর পেছনে ছোটা।
কখনও আবার অন্ধকার জগতের ডন বনে যাওয়া। আবার পরিচালকের পাল্লায় পড়ে মুন্নাভাই এমবিবিএসের গেটাপ ধারণ- সবকিছুই নিজের সঙ্গে মানানসই করে নিয়েছে এই চল্লিশোর্ধ তরুণ! অথচ পেশাদার কোনো অভিনেতা নন তিনি। আগাগোড়াই একজন গায়ক। গান লেখা, সুর করা কিংবা সঙ্গীত পরিচালনা- এসবের ধার ধারেননি কখনও। অকপটে তার স্বীকারোক্তিও দেন। যেটা তাকে দিয়ে হবে না, কিংবা পারেন না সেই কাজটির ধারে কাছেও থাকেন না আসিফ। এটাই তার স্টাইল। এ কারণেই তিনি আসিফ আকবর। এ কারণেই তার রয়েছে ‘আসিফিয়ান’ নামে বিশাল ভক্ত বাহিনী।
বাংলা সঙ্গীতে স্বকণ্ঠে পরিচিতি সর্বশেষ শিল্পী হিসেবে আসিফ আকবরের নামই বারবার উচ্চারিত হয়। নিজেকে সফল সঙ্গীতশিল্পীদের শেষ বংশধর বলেও দাবি করেন এ গায়ক। বিরতির পর ফিরে এসে যেভাবে প্রতাপের সঙ্গে দৌড়াচ্ছেন সেটা সমসাময়িক কিংবা এ সময়ের কোনো গায়কের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। যদিও গত কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছেন, শ্রোতা-দর্শকদের কাছে দৃষ্টিনান্দনিকতার পরীক্ষা তিনি আর দেবেন না।
খুব বেশি প্রয়োজন না হলে এ বছরে শেষ নাগাদ হাতে থাকা কাজগুলো শেষ হলেই মিউজিক ভিডিওকে টাটা জানাবেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কয়দিন পরপর ভূতের আক্রমণ হয়। গত উনিশ বছর ধরে তাই দেখে যাচ্ছি, কয়দিন খুব রমরমা, তারপর আবারও সেই গলা শুকানো আর্তনাদ- ব্যবসা নেই।
এর মূল কারণ হচ্ছে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাব, হুজুগ থেকে বের হতে পারেনি ইন্ডাস্ট্রি। আমি সব সময় চাইতাম ভিডিও যেন গানকে ছাপিয়ে না যায়, গান সব সময়ের আবেদন নিয়ে থাকবে। বছর চারেক আগে ট্রেন্ড শুরু হল মিউজিক ভিডিওর। আমিও পড়ে গেলাম এ চক্করে।
ভিউয়ের বাজারে আজনবি হয়ে ঘুরলাম আড়াই বছর। দিনরাত একাকার করে খাটলাম, এখন শুনি ব্যবসা নেই। এদিকে ক্লান্তিহীন আমার জীবনের রুটিন গেল বদলে। ঘুম, শুটিং, রেকর্ডিং, স্টেজ শো- সব মিলিয়ে লাইফের ওপর ব্যাপক টর্চার বয়ে গেল। আমি পুরো ক্যারিয়ারে স্টেজ শো কম করেছি যেন গলার স্বর এবং সুর ধরে রেখে দীর্ঘদিন রেকর্ডিং করতে পারি। গায়ক মরে যাবে, গান থেকে যাবে ইতিহাস হয়ে। এ ভিউ রোগটা এসে আমাদের গানের বাজেট আকাশচুম্বী করে দিল। কান আছে নাকি নেই, চেক না করেই সবাই দে ছুট চিলের পিছে! এখন শুনি আবারও প্রযোজকদের গলা শুকিয়ে গেছে- ব্যবসা নেই।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এই ভূতের ভয় থেকে বাঁচার জন্য আমি নভেম্বর থেকে অতীব প্রয়োজন না হলে মিউজিক ভিডিও করব না। কিছু গানের ভিডিওর কাজ বাকি, সুস্থ হলেই এগুলো শেষ করে টাটা জানিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মাথায় অবশ্যই বিকল্প প্লান রয়েছে বরাবরের মতো। প্
রচুর টিভি শো করব, তবে দুই-তিন ঘণ্টাব্যাপী নয়। এ ক্ষেত্রে টেলিভিশন এবং রেডিওওয়ালাদের নিজেদের নিয়ে ভাবতে হবে। মানুষের সময়ের দাম আছে, সেটা মাথায় না রেখে হিসাবে রাখতে হবে। একটা পূর্ণাঙ্গ মিউজিক চ্যানেল যে দেশে নেই, সেই দেশে হাওয়া বদলের চিন্তা স্রেফ ধান্দা! এগুলোর মধ্যে আমি নেই, বদলাতে থাকা হাওয়াকে কব্জা করে এগিয়ে যাওয়া যোদ্ধা আমি। চামচামি করে নয়, যুদ্ধজয়ী বীরের মতো এগিয়ে যাব সংকোচহীন চিত্তে ইনশাআল্লাহ্।’
মিউজিক ভিডিওর লাগাম টানার কথা বললেও গত দুই বছরে তাকে পেশাদার অভিনেতার চেয়েও বেশি চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে। শ্রোতা-দর্শক চাহিদার তুঙ্গে থাকা এ সঙ্গীত শিল্পীর পোশাকি পরিবর্তনের কয়েকটি রূপের চিত্র এ প্রতিবেদনের সঙ্গে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।